একদিনের ব্যবধানে ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ দুই দেশ ইতালি ও ডেনমার্কের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ। রোম ও কোপেনহেগেনের সঙ্গে সামগ্রিক বিষয়ে হতে যাওয়া সভায় বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যু উঠে আসবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্র বলছে, আগামী ৭ জুন রোমে বাংলাদেশ ও ইতালির পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক হবে। অন্যদিকে কোপেনহেগেনে আগামী ৯ জুন বৈঠকে বসবে বাংলাদেশ-ডেনমার্ক। দুই দেশের সঙ্গে হতে যাওয়া বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্বে দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। অন্যদিকে রোম ও কোপেনহেগেনের পক্ষে দেশগুলোর পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, এ বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের কথা রয়েছে। নির্বাচনের আগে আগে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক বা আলোচনা শেষ করাটা জরুরি। সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলো না করতে পারলে এগুলো ঝুলে থাকবে। ইতালি ও ডেনমার্কের সঙ্গে ৭ ও ৯ জুন এফওসি (ফরেন অফিস কনসালটেশন) করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইতালির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, সার্বিকভাবে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা হবে। যে বিষয়গুলো ঝুলে আছে সেগুলো পর্যালোচনা করা হবে। নতুন যেসব বিষয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে, সেগুলো আলোচনায় আসবে। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে আলোচনায় রাজনৈতিক, প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি, বিনিয়োগ, রোহিঙ্গা ইস্যু, বিভিন্ন ফোরামে নির্বাচনে সমর্থনের বিষয় আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, দেশটিতে আমাদের অনেক বাংলাদেশি কর্মী থাকে। কর্মীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার সুযোগ আছে।
রোহিঙ্গাদের অর্থায়নে ইতালি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, ইতালি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য দাতাদের অর্থায়ন দিন দিন কমে আসছে। এ ক্ষেত্রে আমরা অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে ইতালির সমর্থন চাইতে পারি।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বৈঠকে অবধারিতভাবে ইউক্রেন প্রসঙ্গ আসবে। এর বাইরে অন্যান্য বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ইস্যু, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলসহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া ইতালির দিকে থেকে দেশটিতে থাকা অবৈধ বাংলাদেশির বিষয়ে কথা তোলার ইঙ্গিত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরাতে ২০১৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জোট রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে হওয়া স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) বাইরে গিয়ে নতুন যে চুক্তির জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সে প্রসঙ্গটি তুলতে পারে রোম।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরও বলছে, র্যাবের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জারি করা ভিসানীতি নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতির বৈশ্বিক বিভিন্ন ফোরামসহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইতালিকে পাশে চাইবে বাংলাদেশ।
কোপেনহেগেনের সঙ্গে এফওসিতে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ডেনমার্কের সঙ্গেও বাংলাদেশের অনেক সেক্টরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে দেশটির সঙ্গে জলবায়ু ইস্যুতে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। গত বছর জলবায়ু ও পরিবেশবান্ধব অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করতে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। ওই চুক্তির আওতায় অভিযোজন ও প্রশমন বিষয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। বাংলাদেশ ডেনমার্ক থেকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও এ বিষয়ে তাদের জ্ঞানের বিনিময়ে সহযোগিতা পেতে পারে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের অর্থায়নে তারা আমাদের সহযোগিতা করতে পারে।