খাদ্যশস্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনতে ৫০ কোটি ডলার এবং সড়ক নিরাপত্তায় ৩৫ দশমিক ৮ কোটি ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রতি ডলার সমান ১০৭ টাকা ৯৩ পয়সা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় ঋণের পরিমাণ ৯ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। দুই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য সড়ক নিরাপত্তা ও কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিবর্তন করা।
বুধবার (৭ জুন) নগরীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ঋণচুক্তি সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান ও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে শেক চুক্তিতে সই করেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘প্রোগ্রাম অন অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রিনিউরশিপ অ্যান্ড রেজিল্যান্স ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বিদ্যমান কৃষি ব্যবস্থাকে রূপান্তর ঘটিয়ে বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিবর্তন করা, খাদ্যশস্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা, কৃষিপণ্য রপ্তানির উদ্দেশ্যে কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি ও উন্নয়ন এবং জলবায়ু সহিষ্ণু অ্যাগ্রিফুড ভ্যালু-চেইনের সম্প্রসারণ।
চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন মেয়াদে দেশের আটটি বিভাগ, ১৪টি কৃষি অঞ্চল, ৬৪টি জেলাসহ ৪৯৫টি উপজেলার সব ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রযুক্তিগত প্রদর্শনী, কৃষক স্মার্টকার্ড প্রবর্তনের মাধ্যমে ডিজিটাল কৃষি সেবা নিশ্চিত করবে।
একই সঙ্গে দেশের সড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও প্রাণহানি কমিয়ে আনতে বাংলাদেশকে সহজ শর্তে ৩৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে বহুজাতিক ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। ‘সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প’-এর আওতায় দেওয়া এ ঋণ বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সহায়তা করবে।
পাইলট ভিত্তিতে দুটি জাতীয় মহাসড়ক গাজীপুর-এলেঙ্গা ও নাটোর থেকে নবাবগঞ্জ সড়কে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। এতে উন্নত প্রকৌশল নকশা, প্রয়োজনীয় সড়ক চিহ্ন, পথচারীদের পারাপারের সুবিধা, গতিরোধকসহ অন্যান্য জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে এ দুটি মহাসড়কে বিদ্যমান ঝুঁকি ও দুর্ঘটনা ৩০ শতাংশ কমবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক বলছে, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ৫ দশমিক ১ শতাংশ ক্ষতি হয়। অনিরাপদ সড়ক অবকাঠামো দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। দুই চাকার গাড়ির সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির কারণে নিবন্ধিত যানবাহনের পরিদর্শন অপর্যাপ্ত থেকে যায়। প্রকল্পটি একটি দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় কর্মসূচি এবং একটি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কৌশল উন্নয়নে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী করবে। এর মাধ্যমে নির্বাচিত কিছু শহর এলাকা এবং জেলা সড়কগুলোর নিরাপত্তায় পাইলট কর্মসূচি নেওয়া হবে। একই সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশ এবং হাইওয়ে টহলের সক্ষমতাও বাড়ানো হবে যাতে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং উচ্চগতির ঝুঁকিপূর্ণ চালকদের শনাক্ত করা যায়।
এ জন্য স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যেমন-সিসিটিভি, ইলেকট্রনিক মেসেজিং, টহল যান বৃদ্ধি এবং দুর্ঘটনা-পরবর্তী উদ্ধারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করার সরঞ্জাম বাড়ানো হবে।
উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটি বলছে, ২০১৬ সালে যারা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন, তাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। এ জন্য একটি টোল-ফ্রি নম্বরের মাধ্যমে অ্যাম্বুলেন্স পরিসেবা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে সড়ক মহাসড়কের পাশের নির্দিষ্ট জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে জরুরি চিকিৎসাসেবা বাড়ানো হবে, যাতে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু কমানো যায়। এছাড়া দুর্ঘটনা-পরবর্তী ট্রমা কাটিয়ে উঠতে আহতদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে যানবাহন ব্যবস্থায় বিদ্যমান অবকাঠামোগত সুবিধাগুলো বাড়ানো হবে। সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, দুর্ঘটনা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা, আইসিটি সিস্টেম উন্নয়ন, যানবাহন নিবন্ধন আধুনিক করা, ড্রাইভার লাইসেন্সিং ও ফ্রি পরিষদ ব্যবস্থা আরও আধুনিক হবে।
একই সঙ্গে সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের আচরণগত উন্নয়নেও এ প্রকল্প কাজে আসবে। সংশ্লিষ্ট তিনটি মন্ত্রণালয়-সড়ক পরিবহন ও সেতু, স্বাস্থ্য এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নিয়েই শক্তিশালী সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। প্রকল্পের আওতায় পুলিশের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সেখানে চালকদের জন্য একটি ব্যাপক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও থাকবে।
বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) থেকে দেওয়া সহজ শর্তে ঋণ ৩০ বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে। পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ড থাকবে, যে সময়ে ঋণের কিস্তি বা আসল বা সুদ কিছুই পরিশোধ করতে হবে না।