যত চাপই আসুক মাথা নত করবে না বাংলাদেশ: শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশি-বিদেশি যত চাপই আসুক বাংলাদেশ মাথা নত করবে না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই দেশ আমাদের। আমরা স্বাধীন করেছি। দেশি-বিদেশি যতই চাপ আসুক না কেন, আমরা কোনো চাপের কাছেই মাথা নত করব না। বাঙালি কোনো চাপের কাছে মাথা নত করে না, করবে না।

বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঐতিহাসিক ছয়দফা দিবসের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি।

আমেরিকার ভিসানীতির কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি যাদের কথা নাচে তারাই তাদের খাবে। আমাদের কিছুই হবে না। আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াও করলে আমেরিকার ভিসা পাবে না বিএনপি। তারা যদি ভাবে নাগরদোলায় বসে থাকেব আর কেউ এসে তাদেরকে (বিএনপি) ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে… কিন্তু বিদেশিরা ক্ষমতায় বসাতে পারেবে না। ক্ষমতায় বসাতে পারে একমাত্র দেশের জনগণ। আমাদের দেশের মানুষের ভোটের অধিকার আমরাই সুরক্ষা করব।

২০১৩-১৪ সালের বিএনপির আগুন সন্ত্রাসের কথা উল্লোখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে যাবে বলে ২০১৩-১৪ সালের আগুন সন্ত্রাস করে শতশত মানুষকে আগুনে পুড়ে হত্যা করেছে। যানবাহন, স্কুল, কলেজ, সরকারি অফিস আগুনে পুড়িয়েছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি আর যেন আগুন সন্ত্রাস করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে।

দেশে গণতন্ত্র বারবার হরণ করতে বিএনপি কাজ করেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও পরে তার উত্তরসূরি খালেদা জিয়ার সমালোচনা করেন। বলেন, ‘বিএনপি সব সময়ই অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেছে।’

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ’১৫ ফেব্রুয়ারি যে নির্বাচন করেছে, সেখানে দুই-তিন পার্সেন্ট ভোটও পড়ে নাই। কিন্তু ঘোষণা দিল ব্যাপক ভোট নিয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী।’

‘তারা আন্দোলন করবে আর আমাদেরকে উৎখাত করবে- এই স্বপ্ন তারা দেখে। একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে। বিএনপি এখন মানুষকে পুড়িয়ে মারলে বা অগ্নি সন্ত্রাস করলে তারাই আমেরিকার ভিসা পাবে না। সেটা একদিক দিয়েই ভালো হয়েছে।’

শেখ হাসিনা দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে। আদালত রায় দিয়েছে কেউ অসাংবিধানিক ভাবে যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে, ক্ষমতায় থাকতে না পারে। আওয়ামী লীগ কখনো এদেশে ভোটারবিহীন ক্ষমতায় আসে নাই। ভোটারবিহীন ক্ষমতায় আসছে জিয়াউর রহমান, এরশাদ। যারা ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতায় আসছে তারা আবার গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলে। ভোট চুরির কারণে খালেদা জিয়াকে দুইবার ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হয়েছে। এখন তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনি, তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনলে হাসি পায়।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যা করে জনগণের জন্য করে। জনগণের ভোটের অধিকার কেউ কেড়ে নিলে জনগণ ছেড়ে দেবে না। জনগণের ভোটের সুরক্ষা দেবে আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশের জনগণ এখন ভোটের বিষয়ে সচেতন জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন ভোটের বিষয়ে সচেতন। সেই সচেতনতা আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে। বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেউ যদি কেড়ে নেয়, মানুষ তাদের ছেড়ে দেয় না। এই খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করেছিল বলেই দেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছিল। এরপরই ৩০ মার্চ বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে। ভোট ডাকাতি যারা করেছিল, এখন তাদের মুখে যখন ভোটের কথা শুনি আর গণতন্ত্রের কথা শুনি, মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে বের হওয়া রাজনৈতিক দলের কাছে গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘২০০১ সালের যে নির্বাচন সেখানেও ব্যাপক কারচুপি করে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে সব সময় জয়ী হয়েছে, জনগণ ভোট দিতে পারলে আওয়ামী লীগ কোনো দিন পরাজিত হয় নাই। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ততবার জনগণের ভোটেই এসেছে, তার বাইরে কখনও ক্ষমতা দখল করে নাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে তারা বলে ভোটারবিহীন। কে ভোটারবিহীন? ভোটারবিহীন তো ছিল খালেদা জিয়া, ভোটারবিহীন তো ছিল জিয়াউর রহমান। ভোটারবিহীন ছিল এরশাদ। এটা তারা ভুলে গেছে। তারা তো ভোটারবিহীন হিসেবেই ক্ষমতা দখল করেছে। আর খালেদা জিয়াকে এজন্য উপযুক্ত জবাব দিয়ে দিয়েছেন এ দেশের জনগণ।’

যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আজকে বিদ্যুৎ, আমি মাত্র ১৫০০ মেগাওয়াট পেয়েছিলাম ১৯৯৬ সালে, ৪ হাজার ৩০০ বাড়িয়েছিলাম। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে (২০০১) সেটা কমিয়ে ৩ হাজারে নামিয়ে এনেছিল, আমরা এরপর সেটা ২৫ হাজার পর্যন্ত করতে পেরেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেব, সেই বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি।’

বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে সারা দেশ যখন তীব্র লোডশেডিংয়ের কবলে-ঠিক সেই সময়ে সুখবর দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, আগামী দুয়েক দিনের মধ্যেই জাতীয় গ্রিডে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা পৃথিবীতে তেলের দাম বেড়েছে। আমরা যে এলএনজি ও গ্যাস আমদানি করি সেগুলোর দামও বেড়ে গেছে। আর আমরা নিজেরা কূপ খনন করে গ্যাস উৎপাদন করেছি। এসব কিছুর মধ্যেও আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। সেই বিদ্যুতের এখন অসুবিধা হচ্ছে। আমরা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছি। আমি জানি মানুষের কষ্ট হচ্ছে। তাদের কষ্ট আমি উপলব্ধি করতে পারি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। দুএকদিনের মধ্যে আরও ৫০০ মেগাওয়াট যুক্ত হবে, ১০-১৫ দিন পর আরও যুক্ত হবে। তারপর আর কষ্ট থাকবে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে অস্বাভাবিক গরম পড়েছে। ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা হবে এটা তো আমরা ভাবতেই পারি না। সেই সঙ্গে বৃষ্টি নেই। আমাদের সবার কষ্ট হচ্ছে আমরা সেটা বুঝতে পারছি। কীভাবে এ কষ্ট থেকে লাঘব পাওয়া যায় সেটার চেষ্টা আমরা করছি। এটা শুধু আমাদের একার কষ্ট না, এটা সারা বিশ্বে হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেয়া বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও এসিরুমে বসে আমাদেরই সমালোচনা করা হয়। আমরা জানি কখন কোন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কখন কোন কথা বলতে হয়।

করোনাভাইরাসকে দেশের অগ্রগতিতে বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনটা বছর চলাচল একেবারে বন্ধ, অর্থনীতি স্থবির, উন্নত দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি পরিচালন ব্যয় পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। আর এরপর আসলো রাশিয়া-উইক্রেন যুদ্ধ। স্যাংশন অ্যান্টি স্যাংশন, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেল।’

শেয়ার করুন