ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে বিভিন্ন শর্ত দেওয়া হয়েছে। এতে করে এলসির হার কমলেও আমদানি দায় পরিশোধ কমেনি। একই সঙ্গে রপ্তানি আয় কমার পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহেও নিম্নগতি চলছে। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। এতে করে বাড়ছে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ। একই সময় সামগ্রিক বৈদেশিক লেনদেনেরও বিশাল ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৫ হাজার ৮৭৮ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এ সময় রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ৩০৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের পণ্য। এতে করে ১ হাজার ৫৭৩ কোটি ১০ লাখ ( ১৫ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) এর পরিমাণ ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি, বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের ঊর্ধ্বগতি ও আশানুরূপ রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ না থাকায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ছে বাংলাদেশ।
বৈদেশিক লেনদেনে সামগ্রিক ঘাটতি বেড়েই চলছে
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বাণিজ্য ঘাটতির সামগ্রিক লেনেদেন ভারসাম্যে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ ঘাটতি প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি বৃদ্ধি মানে বিভিন্ন উৎসে দেশে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, পরিশোধ হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। গত অর্থবছরে বিক্রি করে আরও ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির কারণে ধারাবাহিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। গত বুধবার পর্যন্ত রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।
চলতি হিসাবের ভারসাম্য (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স)
চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসেবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু দেশে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স এখন ঋণাত্মক হয়েছে।
সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭৭ কোটি ২০ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৫৪৮ কোটি ডলার।
ওভারঅল ব্যালান্স
সামগ্রিক লেনেদেনেও (ওভারঅল ব্যালান্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত সামগ্রিক লেনেদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮০ কোটি ডলার। এই সূচকটি আগের বছর একই সময় ঘটতি ছিল ৫২৯ কোটি ডলার।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ১ হাজার ৭৭১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগের বছর পাঠিয়েছিলেন ১ হাজার ৭৩১ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
এফডিআই বেড়েছে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ
দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই- এপ্রিল সময়ে বাংলাদেশ যেখানে ৩৮৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৪২০ কোটি ডলারে উঠেছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়।
আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। এই সূচকটি আগের বছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ কমে ১৪৯ কোটি ডলার হয়েছে। গত অর্থবছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১৬৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
একই সঙ্গে আলোচিত সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) নেতিবাচক অবস্থা অব্যাহত আছে। অর্থবছরে প্রথম ১০ মাসে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল তার চেয়ে ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার চলে গেছে। তার আগের অর্থবছরের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল (ঋণাত্মক) ১২ কোটি ডলার।