করোনা লকডাউনের সময় বিধি ভঙ্গ করে মদ-পার্টি আয়োজনের ঘটনায় সৃষ্ট বিতর্কের জেরে এবার এমপির পদও ছেড়েছেন বরিস জনসন। এক বিবৃতির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা যুক্তরাজ্যে। তার আগে এই পদত্যাগ দেশটিতে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও একবার জনসম্মুখে স্পষ্ট হলো।
শুক্রবারের বিবৃতিতেও সেই ইঙ্গিত মিলেছে। ব্রিটেনের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘কিছু মুষ্টিমেয় লোকের কারণে আমি পদত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে— সেসবের পক্ষে কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই।’
২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় যুক্তরাজ্যজুড়ে লকডাউন জারি ছিল। ওই সময় দেশটিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট, বার প্রভৃতি বন্ধ রাখাসহ সামাজিক মেলামেশায় কঠোরভাবে নিষেধ ছিল এবং লকডাউনের বিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছিল এ সম্পর্কিত সরকারি আদেশে।
কিন্তু ২০২১ সালের শেষের দিকে অভিযোগ ওঠে— লকডাউনের ওই সময় লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে একাধিকবার নিজের বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীসহ মদ-পার্টি উপভোগ করেছেন। পুলিশি তদন্তে এই অভিযোগের সত্যতা মেলার পর এটি পরিচিতি পায় ‘পার্টি গেট কেলেঙ্কারি’নামে এবং এই কেলেঙ্কারির জেরে ২০২২ সালের ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ৫৮ বছর বয়সী বরিস জনসন।
যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে বরিস জনসনই প্রথম প্রধানমন্ত্রী— যার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বিধি লঙ্ঘণের অভিযোগ উঠেছে এবং তার জেরে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে।
গত মে মাসে নতুন একটি অভিযোগ আগে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে। সেই অভিযোগের তথ্য অনুযায়ী, কেবল ডাউনিং স্ট্রিটেই নয়। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে যেসব প্রধানমন্ত্রীর যেসব বাসভবন আছে, যেগুলো সরকারিভাবে ‘চেকার’ নামে পরিচিত— সেসব চেকারেও মহামারির সময় ‘পার্টি’ করেছেন জনসন ও তার বন্ধুরা।
ব্রিটেনের পার্লামেন্ট হাউস অব কমন্সে এ সংক্রান্ত অভিযোগ আসার পর তা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করে পার্লামেন্ট এবং সম্প্রতি তাকে একটি গোপন (কনফিডেনশিয়াল) চিঠিও দিয়েছে পার্লামেন্ট।
চিঠিতে কী লেখা ছিল— সে সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি, তবে শুক্রবারের বিবৃতিতে জনসন অভিযোগ করেছেন, তার বিরুদ্ধে পার্লামেন্ট যে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে— তা পুরোপুরি ‘রাজনৈতিক’ এবং পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতারা তদন্তের নামে একটি ‘ক্যাঙ্গারু আদালত’ গঠন করেছেন, যার প্রধান উদ্দেশ্য তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দেওয়া।
ব্রিটেনের কোনো এমপির বিরুদ্ধে যদি শৃঙ্খলাভঙ্গের গুরুতর অভিযোগ ওঠে— সেক্ষেত্রে দেশটির পার্লামেন্ট সেই এমপিকে অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে পারে। যদি কোনো এমপিকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়— সেক্ষেত্রে ওই এমপি আর কখনও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না।
ধারণা করা হচ্ছে, পার্লামেন্ট কমিটি জনসনকে যে চিঠিটি দিয়েছিল— সেখানে এই সতকর্ববার্তা ছিল। এ কারণে আগেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
সূত্র : রয়টার্স