বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। যদিও অন্ধকারের সরীসৃপরা তাঁকে বারবার হেয়প্রতিপন্ন করার বহু চেষ্টা করেছে। কিন্তু সফল হতে পারেনি। যতবারই তাঁকে বাঙালির হৃদয় থেকে মুছে ফেলার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে, ততবারই তিনি দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে বাঙালির মাঝে ফিরে এসেছেন।
পঁচাত্তরের নির্মম ট্র্যাজেডির পরে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার রাজনীতিতে অভিষেক যেমন তাঁর জন্য আনন্দদায়ক ছিল না, তেমনি তাঁর রাজনৈতিক চলার পথটিও ছিল কণ্টকাকীর্ণ। বহু বন্ধুর পথ অতিক্রান্ত করে শেখ হাসিনাকে আসতে হয়েছে আজকের অবস্থানে।
জনগণকেই একমাত্র আস্থা হিসেবে ভিত্তি করে রাজনৈতিক কল্যাণের যে পথযাত্রা তাঁর শুরু হয়েছিল, তা থেকে কখনোই তাঁকে বিচ্যুত করা যায়নি। বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের একতরফা সংসদ নির্বাচনের নীলনকশাকে সামনে রেখে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জারি হয় জরুরি অবস্থা। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবরণে গঠিত হয় সেনা সমর্থিত ‘অন্তর্বতীকালীন সরকার’।
ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকালে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হন শেখ হাসিনা। একাধিক মিথ্যা মামলায় প্রায় ১১ মাস কারাবন্দি ছিলেন তিনি। পরে জরুরি অবস্থার মধ্যেই নেতাকর্মীদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ও প্রতিবাদের মুখে এবং উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে আট সপ্তাহের জামিনে মুক্তি দেয়া হয় তাঁকে।
মুক্তি পেয়েই চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই তার অস্থায়ী জামিনের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। ২০০৮ সালের ৬ নভেম্বর দেশে ফিরলে স্থায়ী জামিন দেয়া হয় তাকে।
আজ ১১ জুন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস । দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগার থেকে ২০০৮ সালের এই দিনে মুক্তি পান তিনি। প্রকৃতপক্ষে তাঁর মুক্তিতেই সেদিন মুক্তি পেয়েছিল গণতন্ত্র। গণতান্ত্রকামী প্রতিটি মানুষ বিশ্বাস করে আজকের এই দিনটি গণতন্ত্রের মুক্তির দিন। অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার দিন ১১ জুন।
শেখ হাসিনার কারামুক্তির পরের ইতিহাস অর্জনের, এগিয়ে যাওয়ার। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয়ের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগসহ মহাজোট সরকার গঠিত হয়। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে টানা তৃতীয়বারের মতো দেশের শাসনভার পরিচালনা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে বিশ্বের এক সম্মানজনক পর্যায়ে। তাঁর গতিশীল নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে। তবে ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গভীর এক ষড়যন্ত্রের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে দেশ। সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাবলি তারই রেশ। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে বের করতে হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই।
আমরা মনে করি, জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনাই পারবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। দেশ ও দেশের মানুষের প্রয়োজনে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, মত ও পথ।