পার্বত্য জনপদেও অবকাঠামো ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বিগত এক দশকে কয়েক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে। তন্মধ্যে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাঙ্গামাটি জেলায় ১ হাজার ২৬ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের যে অগ্রযাত্রা, সেটি হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সইয়ের পর থেকেই। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বিগত এক দশকে। আগামীতে আরো মেগাপ্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানসমূহের।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) রাঙ্গামাটি কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০০৯-২৩ সাল পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ২৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে কেবল এলজিইডির অধীনেই। এরমধ্যে ২২৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন ও পুনর্বাসন খাতে ব্যয় হয়েছে ৫৮৫ কোটি টাকা। ২৫২২ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৩৬টি সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। গ্রামীণ হাট-বাজার উন্নয়নখাতে ৫টি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১২ কোটি টাকা। কাপ্তাইয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ১২ লাখ টাকা। কাউখালী, জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি ও বরকলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি যাদুঘর নির্মাণ বাবদ ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা। অস্বচ্ছল ও ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন প্রকল্পখাতে ৫টি প্রকল্পে ৪৫ লাখ টাকা। সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০৩টি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি টাকা। তিনটি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। ২২টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পে ১৯ কোটি ও প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩৬০টি ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা।
এছাড়া জেলার হ্রদবেষ্ঠিত উপজেলা বিলাইছড়িকে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতায় আনার লক্ষ্যে ৩৩৮ কোটি টাকার একটি মেগাপ্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ২০২১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি পাশ হয়েছে। প্রকল্পটির অধীনে ৪০ কিলোমিটার সড়ক ও ১৬টি সেতু নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছে এলজিইডি। এছাড়া আসামবস্তি-কাপ্তাই কানেক্টিং সড়কটি ১৮ ফুলে প্রশস্ত করায় জেলার একটি মুগ্ধতার সড়কে পরিণত হয়েছে এটি।
উন্নয়নকর্মী (এনজিও) ও রাইন্যা টুগুন ইকো-রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ললিত সি. চাকমা বলেন, আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কটি প্রশস্তকরণের ফলে এ সড়কের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পেয়েছে। রাঙ্গামাটির অন্যতম দৃষ্টিনন্দন সড়কটি পর্যটকদের কাছে এখন মুগ্ধতার সড়কে পরিণত হবে বলে আশা করছি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা প্রকৌশলী প্রনব রায় চৌধুরী বলেন, এলজিইডি রাঙ্গামাটি জোনের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন কাজ হচ্ছে আসামবস্তি-কাপ্তাই কানেক্টিং সড়ক। প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ১২ ফুট থেকে ১৮ ফুটে প্রশস্তকরণ করা হচ্ছে। সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণের কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এছাড়া ১২০ মিটার, ৯৬ মিটার ও ৪৮ মিটার দৈর্ঘের তিনটি আরসিসি সেতু নির্মাণ বাবদ ১০ কোটি টাকার অধিক ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে সড়কটিতে সেতুর কাজ শেষ হলেও ১৮ ফুট সড়কে ৪০ মিলিমিটার কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। পুরো কাজ শেষ হলে এটি রাঙ্গামাটির সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন সড়কে পরিণত হবে। কার্পেটিংয়ের কাজ শেষে এ সড়কে আমাদের পর্যটকদের জন্য বসার স্থান ও গণশৌচাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
এলজিইডি রাঙ্গামাটি কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি জানান, বর্তমান সরকারের আমলে পাহাড়ে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- সাধিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়ক, চায়েরীবাজার-শান্তিরহাট-বারআউলিয়া সড়ক, চায়েরীবাজার-বর্মাছড়ি সড়ক, কাপ্তাই-রাইখালী-মিতিঙ্গাছড়ি সড়ক, লংগদু-মাইনীমুখ সড়ক, বাঘাইছড়ি-দূরছড়ি সড়ক, বাঘাইছড়ি-লংগদু সড়ক অন্যতম। এছাড়া অনেকগুলো সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরো অনেক কাজ চলমান। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্বপ্নের কারিগরপাড়া-বিলাইছড়ি সড়কটি। ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কে ১৩টি সেতু নির্মিত হবে। এ প্রকল্পটি ২০২৬ সাল নাগাদ শেষ হবে বলে আশা করছি। এটি বিলাইছড়ি উপজেলাকে সড়কপথে সংযোগ করবে।