বিশ্বে প্রতি ৪ জনের মধ্যে অন্তত একজন মানুষ স্বামীর হাতে স্ত্রীর মারধরের শিকার হওয়াকে ‘ন্যায়সঙ্গত’ বলে মনে করেন। এটি যে শুধু পুরুষরা ভাবেন, তা নয়। বরং অনেক নারীও এ ধরণের ধারণা পোষণ করেন।
সোমবার জাতিসংঘের জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) এক জরিপ গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ইউএনডিপির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে লিঙ্গ বৈষম্য একটুও কমেনি, বরং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক এ সমস্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক পক্ষপাতসহ নানা কারণে নারীর ক্ষমতায়ন বাধাগ্রস্ত হওয়াই এমনটি হয়েছে। আর এ কারণেই ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ লিঙ্গ সমতার যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, তা পূরণ সম্ভব নয়।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ‘টাইমস্আপ’ ও ‘মি টু’- এর মতো নারী অধিকার গোষ্ঠী ও সামাজিক আন্দোলন থাকলেও, পক্ষপাতদুষ্ট সামাজিক প্রথা ও করোনা মহামারির মধ্যে অসংখ্য নারী উপার্জন হারিয়েছেন। এটিও লিঙ্গ সমতার অগ্রগতি স্থবির হয়ে পড়ার অন্যতম কারণ।
ইউএনডিপির জরিপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতি ১০ জন নারী-পুরুষের প্রায় নয়জনই নারীর বিরুদ্ধে মৌলিক পক্ষপাত ধারণ করেন। তবে জরিপের আওতায় ৩৮টি দেশে নারীর প্রতি কমপক্ষে একটি পক্ষপাত রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা ৮৬ দশমিক ৯ থেকে ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশে নেমেছে।
ইউএনডিপির গবেষণা ও কৌশলগত অংশীদারবিষয়ক উপদেষ্টা এবং প্রতিবেদনের সহ-লেখক হেরিবার্তো তাপিয়া বলেন, সময়ের তুলনায় উন্নতির মাত্রা হতাশাজনক।
এ সমীক্ষায় আরও বলা হয়, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ মনে করে পুরুষরাই ভালো রাজনৈতিক নেতা হতে পারেন। আর ৪৩ শতাংশ মনে করেন, ব্যবসা-বাণিজ্যেও পুরুষরা ভালো করেন।
ইউএনডিপিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির জেন্ডার বিশেষজ্ঞ অ্যারো সান্তিয়াগো বলেছেন, আমাদের লিঙ্গগত পক্ষপাতিত্ব, সামাজিক রীতিনীতি পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো নারী ও পুরুষের মধ্যে, মানুষের মধ্যে ক্ষমতার সম্পর্ক পরিবর্তন করা।
সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, শিক্ষাকে নারীদের অর্থনৈতিক উন্নতির চাবিকাঠি মনে করা হলেও, শিক্ষা ও আয়ের মধ্যে অসামঞ্জস্যপূর্ণ যোগসূত্র রয়েছে। যে ৫৭ দেশে প্রাপ্তবয়স্ক নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি শিক্ষিত, সেখানেও নারী শিক্ষার সঙ্গে আয়ের ব্যবধান ৩৯ শতাংশ।
সর্বশেষ এ জরিপ গবেষণা প্রতিবেদনে ইউএনডিপি ‘জেন্ডার সোশ্যাল নর্মস ইনডেক্স’ বা লিঙ্গ সংক্রান্ত সামাজিক মূল্যবোধ সূচক অনুসরণ করেছে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশের বসবাস রয়েছে এমন দেশ ও অঞ্চলগুলোর ২০১০-২০১৪ ও ২০১৭-২০২২ সাল মেয়াদের উপাত্ত নিয়ে এ জরিপ চালানো হয়।