নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে বিএনপি নতুন ষড়যন্ত্রে মেতেছে বলে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত করতে সেনা সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে অপপ্রচার শুরু করেছে বিএনপি ও তাদের সহযোগীরা। এ কাজে তারা বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলের।
তবে এসব গুজবে কান না দিতে এবং এসব অপপ্রচারের বিষয়ে জনগণকে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে একটি সতর্কতা পোস্ট দেয় দলটি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে বিএনপির ভেরিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে করা একটি পোস্ট শেয়ার করা হয়।
বিএনপির সেই টুইটে মানবাধিকার সংগঠন হিউমান রাইটস ওয়াচের পোর্টালে ১২ জুন ছাপা হওয়া একটি প্রতিবেদনের লিংক শেয়ার করা হয়। ‘ইউএন শুড এনহান্স স্ক্রিনিং অব বাংলাদেশ পিসকিপারস’ শিরোনামে লেখা এই প্রতিবেদনে র্যাবে কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যদের বিতর্কিতভাবে উপস্থাপন করেন এর লেখক ব্রুনো স্টানো উগার্তে।
প্রতিবেদনটি শেয়ার করতে গিয়ে বিএনপি টুইটে শিরোনাম হিসেবে লিখেছে ‘কিলার্স শুড নট বি পিসকিপার্স’। যার মানে দাঁড়ায়, খুনিদের শান্তিরক্ষী হওয়া উচিত নয়।
বিএনপির ওই টুইটের উদ্ধৃতি দিয়ে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সদস্য না নেয়ার জন্য অফিসিয়ালি প্রচারণা শুরু করেছে বিএনপি। তারা সেনাবাহিনীর সদস্যদের ‘কিলার’ অর্থাৎ খুনি আখ্যায়িত করে তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রচার চালিয়েছে।
তবে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করে পোস্টে বলা হয়, ‘আমাদের সেনাবাহিনী, আমাদের গর্ব। ধিক্কার জানাই ভিনদেশি দালাল বিএনপিকে।’
পোস্টে দাবি করা হয়, কোটি কোটি ডলার খরচ করে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করেছে বিএনপি। আর তাদেরকে দিয়ে দেশের বিরুদ্ধে, দেশের সব বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে দলটি। আসুন বিএনপিকে বর্জন করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ‘খবর আছে’, বলছেন বিএনপি নেতারা
এদিকে মাঠ গরমের রাজনীতিতে এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে তোপ দাগলেন বিএনপি নেতারা। মঙ্গলবার মহাখালীর বাস টার্মিনাল থেকে শুরু হওয়া পদযাত্রা কর্মসূচির আগে কথা বলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, প্রশাসনের যারা অসাংবিধানিক কাজ করছেন, সরকারকে রক্ষায় আন্দোলনে বাধা দিচ্ছেন তারা ঠিক করছেন না। আপনাদের বলবো, আন্দোলনে শামিল হন। আন্দোলনে নেমেছি, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এলে র্যাব-পুলিশে যারা আছেন আপনারা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিলে আপনাদের অবস্থা ভালো হবে না, দেশের অবস্থা ভালো হবে না, চোরদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সরকারের নির্ভরশীলতা প্রশাসনের ওপর, বিএনপির নির্ভরশীলতা জনগণের ওপর। যারা আন্দোলনে বাধা দিবেন তাদের খবর আছে।’
অন্যদিকে অপর এক কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জড়িয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা (আওয়ামী লীগ) শক্তি দেখতে চান। আসেন মাঠে। গদিটা ছেড়ে দিয়ে, পুলিশ-র্যাব ছেড়ে দিয়ে মাঠে আসেন। নির্বাচন দিয়ে দেখুন কার কত শক্তি।’
বিএনপির অপপ্রচারের ফাঁদে এইচআরডব্লিউ
এদিকে বিএনপির অপপ্রচারে লবিস্টরা বিদেশি বিভিন্ন সংস্থাকেও প্রভাবিত করছে। অপপ্রচারের ফাঁদে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
সংগঠনটি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয় যাচাইয়ের আহ্বান জানিয়েছে।
সোমবার (১২ জুন) এক বিবৃতিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।
মূলত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রোইক্সের প্রতি এ আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের এই কর্মকর্তার শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে।
সোমবার ওয়েবসাইটে দেয়া এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়, এমন একটি সময়ে ল্যাক্রোইক্স বাংলাদেশ সফর করবেন, যখন সেখানকার রাজনৈতিক নেতা ও অধিকারকর্মীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দমন-পীড়ন চালাচ্ছেন। এছাড়া বাহিনীর সদস্যদের হাতে তারা গুমেরও শিকার হচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ সফরকালে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের খোলাখুলি উদ্বেগ জানানো উচিত বলে মনে করে এইচআরডব্লিউ।
এইচআরডব্লিউ দাবি করছে, বাংলাদেশে ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যেন দেশের বাইরে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ না নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকারসংক্রান্ত নীতিমালা ব্যর্থ হয়েছে। শুধু উচ্চপদস্থ কর্তকর্তাদের মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয় যাচাইবাছাই করে জাতিসংঘ।
র্যাবের প্রসঙ্গ এনে এইচআরব্লিউ বলছে, জাতিসংঘের উচিত কোনো বাংলাদেশি কর্মকর্তা র্যাবের সঙ্গে জড়িত থাকলে, তা প্রকাশ করা এবং বাহিনীসংশ্লিষ্ট কাউকে শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদানে বিরত রাখা। শুধু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নয়, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সব সদস্যের মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয় যাচাইবাছাই করারও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।