মধ্য আফ্রিকার দেশ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে (ডিআর কঙ্গো) সন্ত্রাসীদের হামলায় ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের শিবিরে হামলায় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (১৩ জুন) এক প্রতিবেনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কঙ্গোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের (আইডিপি) শিবিরে হামলায় ৪৫ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছেন বলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন জানিয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, গত রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত এই হামলার ঘটনা ঘটে এবং কোঅপারেটিভ ফর দ্য ডেভলপমেন্ট অব কঙ্গো বা কোডেকো নামে পরিচিত একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর যোদ্ধারা এই হামলা চালিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
জাতিসংঘ বলেছে, হামলার সময় যোদ্ধারা ডজুগু অঞ্চলের লালা শিবিরে ঝুঁকিপূর্ণ বাস্তুচ্যুত লোকদের গণহত্যা করেছে।
যেখানে এই হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা ঘাঁটির স্থান ৫ কিমি (৩ মাইল) দূরে অবস্থিত। কোডেকো দাবি করে, তারা লেন্দু নামক সম্প্রদায়কে হেমা নামের অন্য জাতিগোষ্ঠী এবং সেইসাথে কঙ্গোর সেনাবাহিনী থেকে রক্ষা করবে।
এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই হামলা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং (শান্তিরক্ষা মিশন) মনে করে, বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত এই ধরনের আক্রমণ যুদ্ধাপরাধ হতে পারে।’
মাকি লোম্বে নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, হামলার পর তিনি মাটিতে ‘৪০টিরও বেশি মৃতদেহ’ পড়ে থাকতে দেখেছেন। রাতে পালিয়ে গিয়ে তিনি বেঁচে যান বলেও জানান তিনি।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ডিজায়ার মালোদ্রা বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘হামলাকারীরা গুলি চালাতে শুরু করে, অনেক লোককে তাদের বাড়িতে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়, অন্যদের ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয়।’
স্থানীয় নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীর প্রধান চারিট বানজা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, নিহতদের গণকবরে দাফন করা হবে। ইতুরিতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংলাপের কয়েকদিন পরে এই হামলার ঘটনাটি ঘটেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে নিরাপত্তা নেই – আমরা এটি প্রতিদিনই বলি।’
তিনি আরও বলেন, ‘রক্তাক্ত এই হামলা ঠিক কী কারণে চালানো হয়েছে তা এখনও জানানো হয়নি।’
আল জাজিরা বলছে, কোডেকো গোষ্ঠী প্রায়শই বাস্তুচ্যুত মানুষের শিবিরগুলোতে হামলা চালিয়ে থাকে। গত বছর তারা বুলের কাছে আরেকটি শিবিরে প্রায় ৬০ জনকে হত্যা করেছিল।
মূলত কঙ্গোর উত্তরে উগান্ডা সীমান্তের কাছেই অবস্থিত ইতুরি প্রদেশ। উত্তর কঙ্গোর এই অঞ্চলটি বরাবরই উত্তেজনাপ্রবণ। সেখানে একাধিক চরমপন্থি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এখানে সক্রিয়।
উল্লেখ্য, ব্যাপক মিলিশিয়া সহিংসতা রোধ করার লক্ষ্যে কঙ্গোর সরকার ২০২১ সালে নর্থ কিভু এবং ইতুরিতে অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু হত্যাকাণ্ড ও বিদ্রোহী তৎপরতা কমার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।