সমঝোতা চাইলে সমস্যার শিকড়ে হাত দিতে হবে

মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.)

মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.)
মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.)। ফাইল ছবি

একবার উইন্সটন চার্চিলকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল রাজনীতিক বা রাজনীতিবিদ কে বা কাকে বলা যায়। প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘The ability to foretell what is going to happen tomorrow, next week, next month and next year. And to have the ability afterwords to explain why it did not happen.’ (Ref: Dominique Enright, The wicked wit of Churchill, Page-17).

কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, জাতিসংঘের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। এ কথা ওই দিন সন্ধ্যায় টেলিভিশনের খবরে প্রচার এবং তার পরের দিন পত্রিকায় ছাপা হয়। ঠিক তার পরের দিনই আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা উপরোক্ত সংলাপের কথা প্রসঙ্গে যা বলেছেন, তাতে চার্চিলের সংজ্ঞা মতে তাঁরা প্রকৃত রাজনীতিকের পারঙ্গমতা কতটুকু দেখাতে পেরেছেন, তা নিয়ে মানুষ এখন অনেক কথাই বলছে।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক বিষয়ে সর্বক্ষণ একপ্রকার মতবিনিময়ের যে প্রয়োজনীয়তা থাকে, তা আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন আছে কি না, সেটি নেতাদের কথাবার্তার ভেতর দিয়ে বোঝা যায়নি। আওয়ামী লীগ শুধু বাংলাদেশ নয়, শুধু উপমহাদেশ নয়, বৈশ্বিক বিবেচনায় যতগুলো পুরনো, ঐতিহ্যবাহী ও পরিপক্ব রাজনৈতিক দল আছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি দল। তাই আওয়ামী লীগের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। রাজনীতিতে সংকট একটি চিরাচরিত ব্যাপার, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে।

উপরন্তু ১৯৭৫ সালের পর দুই সামরিক স্বৈরশাসকের হাত ধরে যে রকম কলুষিত ও সংঘাতময় রাজনীতির প্রবর্তন ঘটেছে, তার সরব উপস্থিতি বাংলাদেশে এখনো আছে। তাই চার্চিলের আরেকটি কথাও এখানে প্রণিধানযোগ্য। ১৯৪৭ সালে পার্লামেন্টে এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘Democracy is the worst form of government except all those other forms that have been tried from time to time.’ (প্রাগুক্ত, পৃ-১৯)

দুই সামরিক সরকারের শাসনাধীন সময়ের কথা বাদ দিয়ে ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেখা যায়, শুধু ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর শান্তিপূর্ণভাবে আগে থেকে চলমান সংবিধানকে অটুট রেখে সেই সংবিধান অনুসারে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং যথাসময়ে অষ্টম জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে সালসা (সাহাবুদ্দীন, লতিফ, সাঈদ) সংঘের অপকর্মের কথায় একটু পরে আসছি।

এর আগে ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যে কয়টি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে তার প্রাক্কালে রাজনৈতিক সংকট ও সেই সূত্রে সমঝোতার চেষ্টা এবং সংলাপের উপাখ্যান সম্পর্কে একটু বলে নিই। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত ও যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় সামরিক শাসক এরশাদের পতন এবং ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে ১৪০ আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিএনপি। ১৮ আসনে জয়ী জামায়াতের প্রত্যক্ষ সমর্থন নিয়ে বিএনপির তখন সরকার গঠন এবং পরে বরিশালের মশহুর একজন একাত্তরের পাকিস্তানি সহযোগীকে রাষ্ট্রপতি করার মধ্য দিয়ে জিয়া-উত্তর নব্য বিএনপির মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী রাজনীতির নব্য চেহারা মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়। তারপর বিএনপির সেই মেয়াদে পাকিস্তানি জেনারেল রশিদ জানজুয়া, যিনি একাত্তরে বাংলাদেশে চাকরিরত ছিলেন, তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় সব শিষ্টাচার ভঙ্গ করে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যখন আনুষ্ঠানিক শোকবার্তা পাঠালেন, তখন বাংলাদেশের মানুষের বুঝতে বাকি রইল না যে বিএনপির রাজনীতির শিকড় কোথায়। পরে পাকিস্তানের পত্রিকায়ই এমন খবর বেরিয়েছে যে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বিএনপিকে বিশাল অঙ্কের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ পপুলার ভোট বেশি পায়। বিএনপি পায় প্রদত্ত ভোটের শতকরা ৩০.৮১ ভাগ, আর আওয়ামী লীগ পায় শতকরা ৩৩.৬৭ ভাগ (এ এস এম সামছুল আরেফিন, বাংলাদেশের নির্বাচন ১৯৭০-২০০১, প্রকাশিত ২০১১, ইংরেজি ভার্সন, পৃ.-৭)। কিন্তু সংসদ নির্বাচনে ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ পদ্ধতির কারণে বিএনপি আসনসংখ্যা বেশি পেয়ে যায়। তাই যেকোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে হেরে যাওয়ার একটা ফোবিয়া বা ভীতি বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়। এতে সেই মেয়াদে অনুষ্ঠিত মিরপুর ও মাগুরার উপনির্বাচনে ছলেবলে, কলাকৌশলে মরিয়া হয়ে বিএনপি মাঠে নামে যেকোনোভাবে প্রমাণ করতে হবে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি বেশি জনপ্রিয়। এর ফলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চরম অপব্যবহারের মাধ্যমে ওই দুই উপনির্বাচনে সীমাহীন ভোট কারচুপির ঘটনা ঘটে এবং বিএনপির প্রার্থীকে জয়ী করা হয়। তাই আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলের বদ্ধমূল ধারণা হয়, বিএনপি সরকারের অধীনে আগামী দিনে আর সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। শুরু হয় তুমুল গণ-আন্দোলন এবং অস্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়। সমঝোতা ও সংলাপের বিষয়টি সামনে আসে। কমনওয়েলথের মহাসচিব বাংলাদেশে আসেন এবং দুই নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। মধ্যস্থতার জন্য মহাসচিবের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিফেন নেনিয়ান বাংলাদেশে আসেন। ঢাকায় বেশ কয়েক দিন ঘর্মাক্ত সময় কাটিয়ে ব্যর্থ মনোরথে নিনিয়ান ফেরত যান। সংলাপ এবং কোনো সমঝোতার প্রস্তাবই সফল হয় না। বিএনপি সরকার তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখেও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি ভোটারহীন নির্বাচন করে ফেলে। কিন্তু সংবিধানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্ম দিয়ে মাত্র দেড় মাসের মাথায় বিএনপি সেইবার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়।

এভাবেই বিএনপির কার্যকলাপের ফলে তাদের হাত ধরেই জবাবদিহিহীন, অগণতান্ত্রিক ও জনসম্পর্কহীন একটি উদ্ভট ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটে, যার বিষাক্ত ছোবলে ২০০৭-০৮ মেয়াদে বাংলাদেশ সব কিছু হারাতে বসে। ১৯৯৬ সালের জুন মাসের সপ্তম সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা, মেয়াদান্তে ২০০১ সালের মধ্য জুলাইয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সংবিধান অনুসারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে নির্বাচনের জন্য দায়িত্ব হস্তান্তর করে দেয়। কিন্তু জাতির পিতার প্রতিকৃতি ও ছবি পর্যন্ত বিএনপির ক্যাডার বাহিনী কর্তৃক চরম অবমাননার পরও সালসা সংঘের তত্ত্বাবধায়ক সরকার নীরব থাকায় মানুষের কাছে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যায় এবং নির্বাচনটি যেভাবে সম্পন্ন হয়, তাতে সামগ্রিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি জনমানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেল।

২০০১-০৬ মেয়াদের বিএনপি পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নিজেদের পক্ষে রাখার জন্য অন্য ক্যাডার সার্ভিস নয়, শুধু উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের বয়সসীমা বাড়িয়ে দেয়, যাতে বিএনপির একান্ত পছন্দের প্রধান বিচারপতি কে এম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে পারেন। একই সময়ে বিএনপির নিয়োগকৃত এম এ আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন প্রায় এক কোটি ২৮ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করে। সংগত কারণেই ২০০৬ সালের শেষের দিকে আবার রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। আপস-সমঝোতার জন্য দুই পক্ষের সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে একাধিকবার সংলাপ হয়। আবদুল মান্নান ভুঁইয়া ও আব্দুল জলিলের মুখচ্ছবি এখনো মানুষের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু সব কিছু নিষ্ফল হয়ে যায়।

২০০৭-০৮ মেয়াদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষাক্ত দংশন থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, কেউ রক্ষা পায় না। কিন্তু একসময়ে তারা জনমানুষের কাছে পরাজয় মানতে বাধ্য হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে পরিস্থিতিটা একটু ভিন্ন হয়। বিএনপিসহ বিরোধী দলের দাবির মুখে সরকারি দল আওয়ামী লীগ সমঝোতা করার জন্য অনেকটাই এগিয়ে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিএনপি নেত্রীকে টেলিফোন করেন। সমঝোতার প্রস্তাব দেন এবং আলোচনার আহ্বান জানান। কিন্তু খালেদা জিয়া আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। বিএনপি নেত্রীর অনমনীয় অবস্থান এবং অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য এবারও সমঝোতা ও আপসের পথ নষ্ট হয়ে যায়।

সব রাজনৈতিক দলেরই দোষগুণ আছে। কিন্তু ১৯৯৬ ও ২০০৭ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারে থেকে বিএনপির কর্মকাণ্ডের জন্য সে সময়গুলোতে রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়। তার পরও ২০১৪ সালেই নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাব আর খালেদা জিয়ার ঔদ্ধত্যপূর্ণ প্রত্যাখ্যান ইত্যাদির দ্বারা কী প্রমাণ হয়। এসব লিগ্যাসি মানুষের মনে জ্বলজ্বলে থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ এমন কোনো দায়ে পড়েছে কি না, জানি না যে এখন বিএনপির রাজনৈতিক দাবি আওয়ামী লীগকে পূরণ করতে হবে, মেনে নিতে হবে। বিএনপির কর্মদোষের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। আবার তাদের ২০০৬ সালের কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিলুপ্তির পথ প্রসারিত হয়। আর ২০০৭-০৮ মেয়াদে বিষাক্ত থাবা দেখার পরও যারা এখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইছে, তারা দেশের কল্যাণে তো নয়ই, নিজেদের কল্যাণেও নয়, বরং নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার মতো সর্বনাশা এক খেলায় নেমেছে। তাদের ভাবখানা এমন, দেশ গোল্লায় যাক, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম নিশ্চয়ই বিশ্লেষণ করবে, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে এ পর্যন্ত ২৮ বছরে কখনোই কেন সংলাপ সফল হতে পারল না। সবাই ভালো চায়, তাহলে মন্দ চায় কে। মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর বাহাত্তরের সংবিধান, দুটি মহৎ অর্জনই হয়েছে দেশের প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের ঐকমত্যে। একবার ভেবে দেখুন, এত বড় জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে অর্জিত ফসল যদি ভেঙে ফেলা হয়, তাহলে বর্তমান বাস্তবতায় আর কি কখনো জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে কিছু করা যাবে? মুক্তিযুদ্ধ ও বাহাত্তরের সংবিধান কোনো দলের নয়, জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই জায়গায় সব পক্ষ এক হয়ে সমবেত হলে, তারপর অন্যান্য যত বিষয় আছে, তা নিয়ে সংলাপ ও সমঝোতা সহজ হয়ে যাবে।

১৯৭৫ এবং তারপর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ঘটনা কি প্রমাণ করে না যে একটি পক্ষ শতকরা ওই ৮০ ভাগ মানুষের ঐক্যে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও রাজনীতিকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টায় রত? সুতরাং সমঝোতা হবে কার সঙ্গে কার। যারা সুযোগ পেলেই মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্র ও রাজনীতিকে বিনাশ করতে চায়, তাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির আপস-সমঝোতা হয় কী করে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনীতি তো বাংলাদেশে চলতে পারে না। যারা একাত্তরের স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র মানে না এবং জাতির পিতার প্রতি আনুষ্ঠানিক সম্মান দেখায় না, তাদের কি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল বলা যায়? সুতরাং আপস-সমঝোতা হতে হলে বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী রাজনীতি পরিত্যাগ করতে হবে। দৃশ্যমান ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং জাতির পিতার প্রতি আনুষ্ঠানিক সম্মান দেখাতে হবে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের পথে অর্জিত ঐতিহাসিক গৌরবোজ্জ্বল ঘটনাগুলো আড়াল করা চলবে না, বরং সেগুলোর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতে হবে। সমঝোতা ও আপসের শিকড় এখানেই নিহিত।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

sikder52@gmail.com

শেয়ার করুন