মিরপুরে মুশফিক-মিরাজের ব্যাটে শেষ বিকেলে স্বস্তি

ক্রীড়া ডেস্ক

নাজমুল হোসেন শান্ত আর মাহমুদুল হাসান জয়ের দুইশোর্ধ্ব জুটি বড় রানের ভিত গড়ে দেয়। মিরপুর টেস্টের প্রথম দুই সেশনে আফগান বোলারদের ওপর ছুড়ি ঘোরায় স্বাগতিকরা।

এরপর তৃতীয় সেশনে এসে দ্রুত কয়েকটি উইকেট তুলে নিয়ে লড়াইয়ে ফেরে আফগানিস্তান। তবে শেষ বিকেলে আরেকটি জুটি দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন মুশফিকুর রহিম আর মেহেদি হাসান মিরাজ।

universel cardiac hospital

মুশফিক-মিরাজ জুটিতে এখন পর্যন্ত যোগ করেছেন ৭২ রান। ৫ উইকেটে ৩৬২ রান নিয়ে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ। মুশফিক ৪১ আর মিরাজ ৪৩ রানে অপরাজিত আছেন।

শেরে বাংলায় সিরিজের একমাত্র টেস্টে টস জিতে বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠান আফগান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহীদি।

ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় টাইগাররা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে নিজের প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পান আফগানিস্তানের অভিষিক্ত পেসার নিজাত মাসুদ।

মাসুদের বেরিয়ে যাওয়া বলে হালকা ব্যাট ছুঁয়ে যায় জাকির হাসানের। আফগানিস্তানের ক্রিকেটারদের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দেননি। রিভিউ নেয় সফরকারীরা। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল লেগেছে জাকিরের ব্যাটে (১)। দলীয় ৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

শুরুতেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। তবে নাজমুল হোসেন শান্ত ক্রিজে এসে সেই চাপ সরিয়ে দেন বোলারদের ওপর। মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে গড়েন দারুণ এক জুটি।

চোখ ধাঁধানো সব বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শান্ত চালু রাখেন রানের চাকা। সেই তুলনায় জয় ছিলেন একটু ধীরস্থির। শান্ত তার ফিফটিও তুলেছেন দ্রুতগতিতে, মোটে ৫৮ বলে। যার মধ্যে ৪০ রানই আসে বাউন্ডারিতে। পরের ৫০ রান তুলতে অবশ্য খেলেছেন দুই বল বেশি (৬০ বল)। বাউন্ডারি হাঁকান আরও ৮টি।

গত এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে দুই ইনিংসে করেছিলেন ০ আর ৪। তবে এরপর আইরিশদের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের মাটিতে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিসহ ওয়ানডে সিরিজের সেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন শান্ত।

সীমিত ওভারের সে ফর্ম এবার সাদা পোশাকেও টেনে আনলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। মারকুটে খেলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন ১১৮ বলে।

ফিফটি পেয়েছেন তার বড় জুটির সঙ্গী জয়ও। তবে তিনি বেশ দেখেশুনে খেলেছেন। ১০২ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন টাইগার ওপেনার। লেগস্পিনার জহির খানের বলে দুইবার ওভার থ্রো হলে দৌড়ে ৫ রান নেন শান্ত আর জয়। তাতেই ফিফটির ঘরে পা পড়ে জয়ের। যদিও সেঞ্চুরির সুযোগ হাতছাড়া করেছেন ভুলভাল শট খেলে।

বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছিল জয়কে। বারকয়েক আলগা শট খেললেন। অবশেষে উইকেটটা জমা দিয়ে এলেন ডানহাতি এই ওপেনার। জয়ের আউটে ভাঙে শান্তর সঙ্গে ২৬৭ বলে গড়া ২১২ রানের বড় জুটি। টেস্টে দ্বিতীয় উইকেটে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা জুটি।

পার্টটাইম লেগস্পিনার রহমত শাহর বেরিয়ে যাওয়া বলে কাট করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন জয়। ১৩৭ বল খেলে গড়া তার ৭৬ রানের ইনিংসে ছিল ৯টি বাউন্ডারির মার। বাংলাদেশ চা-বিরতিতে যায় ৪৯ ওভারে ২ উইকেটে ২৩৫ রান নিয়ে।

বিরতির পর ঘুরে দাঁড়ায় আফগানিস্তান। মুমিনুল হকের অফফর্ম কাটছেই না। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে রানে ফেরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এবার ব্যর্থ হলেন টেস্ট খেলতে নেমেও।

আফগান অভিষিক্ত পেসার নিজাত মাসুদের লেগ সাইডে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট ছুঁইয়ে সাজঘরে ফিরেছেন মুমিনুল (১৫)। আম্পায়ার অবশ্য শুরুতে আউট দেননি। রিভিউ নিয়ে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলায় আফগারা।

এরপর ফিরে যান দুর্দান্ত খেলা নাজমুল হোসেন শান্তও। তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসটি ১৬৩ রানের। শান্ত যেমন আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলছিলেন, তাতে সেই ইনিংস ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু একটা সময় ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেলো বাঁহাতি এই ব্যাটারের।

আফগান বাঁহাতি স্পিনার আমির হামজার বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন শান্ত। ১৭৫ বলে গড়া শান্তর ১৪৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটিতে ছিল ২৩টি চার আর ২ ছক্কার মার।

এই টেস্টেই অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হয়েছে লিটন দাসের। নেতৃত্বের চাপেই কি স্বাভাবিক ব্যাটিংটা করতে পারলেন না? খুবই দৃষ্টিকটু আউটে সাজঘরে ফেরেন টাইগার দলপতি।

রিস্ট স্পিনার জহির খানের বলে খোঁচা দিয়ে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন লিটন। ১৫ বলের ইনিংসে একটি ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি করেন ৯ রান।

১ উইকেটেই ২১৮ রান তুলে ফেলা বাংলাদেশ পরে ৭২ রান তুলতে হারিয়ে বসে ৪টি উইকেট। শেষ বিকেলে মুশফিক-মিরাজ হাল না ধরলে দিনটা আক্ষেপেই কাটতো স্বাগতিকদের।

শেয়ার করুন