দীর্ঘ ৩২ বছরের কারাজীবনে একে একে ২৬ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছেন আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া। ফাঁসি কার্যকর করে সাজা কমলেও শাহজাহান ভূঁইয়া জানান, কাজটি করা তার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। বরং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই আসামির জন্য তার মায়া হতো। কিন্তু কর্তব্যের খাতিরে কাজটি তাকে করতে হতো। আজ রোববার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শাহজাহান ভূঁইয়া মুক্ত হন।
কারাফটকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলাম। এ সময় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও সহযোগিতা পেয়েছি। তারা আমাকে আদর ও সম্মান করেছে। আমি কারাগারে ভলো ছিলাম।
ফাঁসির আগে আসামিকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়েছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিটি ফাঁসিতে কিছু না কিছু আবেগ জড়িত থাকে। মানুষ যত অপরাধীই হোক, সে যখন মৃত্যুর দাঁড়ায় মুখে তখন মায়া লাগে। আমি না হয় মায়া করলাম, কিন্তু আইন-আদালত তো আর কাউকে ক্ষমা করবে না। তাই মায়া লাগলেও আইনের আদেশ পালন করতে গিয়ে ফাঁসি তো দিতেই হতো।
কারাগারের প্রধান জল্লাদ হিসেবে যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী, বঙ্গবন্ধুর খুনি বজলুল হুদা ও শাহরিয়ার রশিদের মতো অপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করেছেন শাহজাহান ভূঁইয়া। এ ছাড়াও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, এরশাদ শিকদার ও বাংলা ভাইয়ের ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে তার হাতে।
কারামুক্ত হয়ে ফাঁসির সময় আসামিদের প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন আলোচিত এই জল্লাদ। কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার ও শীর্ষ জঙ্গিনেতা বাংলা ভাইয়ের ফাঁসির আগমুহূর্তে তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরশাদ শিকদারকে ফাঁসি দেওয়ার আগে তিনি দাঁড়িয়ে বলেছিলেন আমি জীবনে কোনো অন্যায় করিনি, আমার জন্য দোয়া করবেন। বাংলাভাই ফাঁসির আগে তেমন কিছু বলেননি। তবে তিনি ফাঁসির আগে বলেছিলেন ‘মৃত্যুর পর যেন আমার ছবি তোলা না হয়।’
ফাঁসির আগে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, একটা মানুষ যতই উচ্ছৃঙ্খল থাকুক না কেন, যখন তিনি জেনেছেন মারা যাবেন, তখন তিনি আর কোনো কথা বলেন না, চুপচাপ থাকেন। তিনি কারাগারে থাকার সময় উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছেন বলে জেনেছি। তবে ফাঁসির দিন তিনি কোনো উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেননি। তিনিও জানতেন, এখানে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে কোনো লাভ নেই। আমাকে চলে যেতেই হবে।
এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে তিনি বলেন, ফাঁসির আগে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা কেউ কোনো কথা বলেনি। যুদ্ধাপরাধীরাও ফাঁসির আগে কোনো কথা বলেনি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী কন্যা শারমীন রীমা হত্যা মামলার আসামি মুনির ফাঁসি কার্যকরের আগে সিগারেট চেয়েছিলেন বলেও জানান তিন দশক পর কারামুক্ত হওয়া এই জল্লাদ। বলেন, মুনির ফাঁসির আগে বলেছিলেন, আমাকে একটা সিগারেট দেন আমি খাবো।
ফাঁসির সময় কারও মাথা আলাদা হয়ে যায় কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কখনও হয় না। এগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া কথা। আসামির উচ্চতা ও ওজন অনুযায়ী ফাঁসির ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য ফাঁসির সময় কারো মাথা আলাদা হয় না।
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে মানিকগঞ্জের একটি মামলায় শাহজাহান ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রথমে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে রাখা হলেও পরে তাকে দেশের বিভিন্ন জেলে রাখা হয়। দীর্ঘ ৩১ বছর ৬ মাস ৭ দিন কারাভোগের পর আজ মুক্ত হন তিনি। তার বাড়ি নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ইছামতী গ্রামে।