বাংলাদেশের কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারত হস্তক্ষেপ করেছে কি না, এমন তথ্য জানা নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে কি না, তা-ও কখনো ভারত জানতে চেয়েছে কি না, তা জানা নেই। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর স্বামীবাগ আশ্রম প্রাঙ্গণে ইসকন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও তা-ই হবে। ভারত বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ। অন্য দেশের নির্বাচন নিয়ে তারা হস্তক্ষেপ করে না। ইসকনের চাইল্ড প্রোটেকশন টিমের চেয়ারম্যান হিরেন সরকারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য নির্মল চ্যাটার্জি, ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মৃন্ময় চক্রবর্তী প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে নির্বাচন কারও আদেশ বা নির্দেশে হবে না। বহিঃশক্তির পরামর্শেও হবে না। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। তিনি বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশটির কয়েক হাজার সৈন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেছিল। কিন্তু এই বন্ধুত্বের মানে এই নয় যে, ভারত এসে আমাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। এমন উদ্ভট চিন্তা আওয়ামী লীগ করে না।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচনের সম্পর্ক কী, তা আমার জানা নেই। মোদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা করবেন, সেটা তাঁর নিজস্ব বিষয়। বিশ্বে অস্থিরতা, যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি, জ্বালানিসংকট—এসব বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হবে। বাংলাদেশ নিয়ে কোনো কথা হবে কি না, তা আমার জানা নেই। আমরাও মোদির কাছে এমন কোনো প্রস্তাব পাঠাইনি বাইডেনকে বোঝানোর জন্য।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। উদ্দেশ্য সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরা বলছি, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। হিন্দু-মুসলমান সবাই যাতে ভোট দিতে পারে, সরকারের এখন সেই চিন্তা।’
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, আর পাঁচ-ছয় মাস পর জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। নির্বাচন সামনে রেখে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক, ভয়, শঙ্কা ঘুরপাক খাচ্ছে। অতীতে যতবারই নির্বাচন নিয়ে বেশি আশঙ্কা ছিল, রাজনীতির আকাশ তত পরিষ্কার ছিল। যত বেশি অন্ধকার মনে হবে, আলো-ঝলমলে একটা সুন্দর সকাল তত ঘনিয়ে আসে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে কোনো কোনো মহল আছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তাদের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের মানে হচ্ছে আওয়ামী লীগ পরাজিত হওয়া। বিএনপির পাশাপাশি কয়েকটি দলের মনোবাসনাও তেমন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের নিজেদের মাইনরিটি (সংখ্যালঘু) মনে করা উচিত নয়। একজন মুসলমানের ভোটের যেমন অধিকার আছে, হিন্দুধর্মাবলম্বীদেরও ভোটের সমান অধিকার।
হিন্দুধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আপনারা মুক্তিযুদ্ধে শান্তি ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। আপনারা আমাদের সহযাত্রী। বঙ্গবন্ধুর ডাকে বহু সনাতন ধর্মাবলম্বী সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের ঘটনায় বলেছিল, ৭০ জন মারা গেছে। পরে তদন্ত করে দেখা গেল, ৬৬ জন ক্লাস করছে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী সারা দুনিয়ায় প্রশংসার সঙ্গে কাজ করছে। অথচ তাদের নিয়ে টিআই প্রশ্ন করছে। তাদের সঙ্গে বিএনপিও সুর মেলাচ্ছে। এভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।