সার্বিকভাবে নির্বাচন ভালো হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে ৫২ শতাংশ আর সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪৬ শতাংশ।
নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে বসে সিসিটিভিতে সারাদিন দুই সিটির ভোট পর্যবেক্ষণ করে বুধবার (২১ জুন) বিকেলে এতথ্য জানান তিনি।
সিইসি সাংবাদিকদের জানান, ভোটের পরিস্থিতি ভালো ছিল। মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে পাঁচটি সিটি করপোরেশনের ভোট অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এতে মানুষ জাতীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে যেতে উৎসাহ পাবে।
আনন্দমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনে উল্লেখ করার মতো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তিনি।
তবে রাজশাহীতে ভোটে প্রভাবিত করার অপরাধে এক নারীকে তিন দিনের জেল দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা তদন্ত করব সেখানে কোনো নির্বাচনী অফিসারের দায়িত্বে গাফিলতি আছে কি না।
এর আগে, সকাল থেকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্য কর্মকর্তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় কন্ট্রোল রুম থেকে তারা স্থানীয় পর্যায়ে ভোটের সার্বিক খোঁজ-খবর নেন। ২৩টি ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে একইসঙ্গে ৩৬৮টি সিসি ক্যামেরায় ২৫২০টি ভোটকক্ষ পর্যবেক্ষণ করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিটি ডিজিটাল ডিসপ্লে ১০ সেকেন্ড পরপর অটো রোটেট করে। এভাবে ৩৪৫টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়। প্রতিটি ভোটকক্ষে একটি করে আর কেন্দ্র প্রতি দুটি করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হয়।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের শেষ ধাপে রাজশাহী ও সিলেট সিটির ভোটগ্রহণ শেষ হয় বিকেল ৪টায়। তবে সিলেটে দুয়েকটা কেন্দ্রে ভোটার থাকায় চারটার কিছু সময় পরেও ভোটগ্রহণ করা হয়।
নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী না থাকা এবং সবশেষ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভোট বর্জন করার পাশাপাশি বৃষ্টির বাগড়ায় ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা ছিল। তবে সব শঙ্কা উড়িয়ে ভোট শুরুর এক-দুই ঘণ্টা পরেই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে শুরু করে।
রাজশাহী সিটি নির্বাচন
রাজশাহী সিটি নির্বাচনে এবার মেয়র পদে প্রার্থী তিনজন লড়ছেন। তারা হলেন: আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন (লাঙ্গল) ও জাকের পার্টির প্রার্থী লতিফ আনোয়ার (গোলাপ ফুল)। তবে ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী মুরশিদ আলম (হাতপাখা) আগেই নির্বাচন বয়কট করেছেন।
এবার ২৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১১১ জন। একটি ওয়ার্ডে একজন কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে রয়েছেন ৪৬ জন প্রার্থী। এখানে ভোটার ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ছয়জন। তৃতীয় লিঙ্গের একজন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীও রয়েছেন।
১৫৫টি কেন্দ্রে ইভিএমে সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলে। ভোটকক্ষ ছিল ১১৫৩টি। ১৪৬৩টি ক্যামেরার মাধ্যমে রাসিক নির্বাচনে ভোটগ্রহণ মনিটরিং করা হয়।
সিলেট সিটি নির্বাচন
এদিকে সকাল ৮টায় সিলেট সিটি নির্বাচনেও ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন সাতজন। এরইমধ্যে নির্বাচন বর্জন করে মাঠ ছেড়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান।
দলীয় মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল ও জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম। এছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মো. আবদুল হানিফ (কুটু), মো. ছালাহ উদ্দিন (রিমন), মো. শাহ্ জামান মিয়া ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।
কাউন্সিলর পদে ৩৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে ২৭৩ জন সাধারণ ওয়ার্ডে এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (নারী কাউন্সিলর) ৮৭ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সিসিক নির্বাচনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। মোট ৪২ ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্র ছিল ১৯০টি। এর মধ্যে স্থায়ী মোট ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩৬৭টি এবং অস্থায়ী ছিল ৯৫টি। ১৭৪৭টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সিসিক নির্বাচনে ভোটগ্রহণ মনিটরিং করা হয়।