একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় যশোরের আমজাদ হোসেন মোল্লাসহ ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মো. ওহাব মোল্লা, মো. মাহতাব বিশ্বাস, মো. ফসিয়ার রহমান মোল্লা ও মো. নওশের বিশ্বাস।
আজ রোববার ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণার করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।
এর আগে বুধবার (২১ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন। আদালতে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, মো. সাহিদুর রহমান ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম ও আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। এর আগে চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১১ মে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখেন। তারই ধারাবাহিকতায় এ রায় ঘোষণা করা হয়।
এটি ট্রাইব্যুনালের ৫২তম রায়। এদিন সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে রায় পড়া শুরু হয়। মোট ১৬৯ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথমাংশ পাঠ করেন বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম। দুই-তৃতীয়াংশ পাঠ করেন বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার।
রায়ের মূল অংশ ও দণ্ড ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। রায় ঘোষণাকালে এ মামলায় গ্রেফতার হওয়া একমাত্র আসামি মো. আমজাদ হোসেন মোল্লা এজলাসের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে আটক, নির্যাতন, হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি অভিযোগ আনা হয়। ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত শুরু হয়। ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল শেষ হয়।
২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল রাজধানীর ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে অন্য মামলায় গ্রেফতার থাকা আমজাদ হোসেন মোল্লাকে ২০১৭ সালের ২২ মে হাজিরের পর থেকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়।
এ মামলার চার আসামি পলাতক ছিলেন। এর মধ্যে নওশের বিশ্বাস মারা যান। ফলে এখন আসামি চারজন। আমজাদ মোল্লা যশোর বাঘারপাড়া থানার রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে আটক, নির্যাতন, হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ গঠন করা হয় ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন আমজাদ মোল্লা। এরপর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত শুরু হয়ে ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল শেষ হয়।
এরপর অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠনের মধ্যদিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়। ওপেনিং স্টেটমেন্টের মধ্য দিয়ে মামলায় সাক্ষ্য শেষে যুক্তি-তর্ক (আরগুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্যে দিন ঠিক করেন আদালত।