তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি মৃত ইস্যু, দেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশেরর মাটিতে এটা আর আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি।
তিনি বলেন, পলাতক তাদের নেতা তারেক রহমানকে এমনভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার শারীরিক নির্যাতন করেছিল এয়ারপোর্টে হেঁটে যেতে পারে নাই। তারাই বেহায়ার মতো আজ আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছে।
শনিবার (২৪ জুন) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে কামরুল ইসলাম বলেন, আগামী নির্বাচন হবে যথা সময়ে। সেই নির্বাচন সরকারের দায়িত্ব পালন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করবেন। নির্বাচন কমিশনে সরকার কোনো প্রভাব বিস্তার করবে না। ফ্রি ফেয়ার নির্বাচন হবে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে যেন সবাই অংশগ্রহণ করেন; সেই আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
অগ্রগতির বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সব ক্ষেত্র বাংলাদেশের অর্জন আছে। এমন কোনো ক্ষেত্র নাই যে আজ বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। এমন অবস্থায় দেশকে নিয়ে আজ গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের সাধারণ মানুষের ওপর আস্থা আছে। আর জামায়াত বিএনপির আস্থা হচ্ছে বিদেশিদের ওপর।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যারা সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়েছিল, ১৯৭৪ সালে যারা খাদ্যের জাহাজ ফিরিয়ে নিয়েছিল। ১৯৭৫ সনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল সেই বিদেশি শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে তারা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। প্রধানমন্ত্রী আকার ইঙ্গিতে ষড়যন্ত্রের কথাগুলো বলছেন। আর সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কথা বলেই ফেলেছেন তিনি।
দেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর ওই সদস্য বলেন, আমাদের সকল উন্নয়নকে তারা থামিয়ে দিতে চায়। বিএনপি-জামায়াত দেশকে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো অকার্যকর রাষ্ট্র বানাতে চায়। এরা বিষধর সাপ। সবশেষ ছোবল মারার জন্যে ফণা তুলবেই। সেই সাপের ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত আমাদের ভেঙে দিতে হবে। দেশ বিরোধী শক্তিকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। তিনি সবাইকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানান।
আমি কর্মীর ঐক্যে বিশ্বাস করি: মোকতাদির চৌধুরী এমপি
জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগকে একটি অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে তথা জনগণের দল হিসেবে গড়ে তুলে ছিলেন, অসাম্প্রদায়িকতাই হচ্ছে তার রাজনীতির মূল দর্শন। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগের ভিতরে বসেই অনেকে আওয়ামী লীগকে সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট করার জন্য নানারকম চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাদের বিষয়ে সবাইকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আমি নির্বাচন করব কী করব না, সেটির সিদ্ধান্ত দেবেন আমার নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই আসন বহুকাল পরে আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তির হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে জনবান্ধব রাজনৈতিক নেতাদের হাতে তুলে দিতে পেরেছি। এই আসন সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করতে পেরেছি। একসময় এমন অবস্থা ছিল- এখানে নৌকা বাইচ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ হতো না। এমনকি সাম্প্রদায়িক শক্তি এমন এক জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছিল, জেলা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম ইন্তেকালের পর বিউগল বাজিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে কবর দিতে বাধা দেওয়া হয়। পরে বিউগল না বাজিয়েই তাঁকে কবর দিতে হয়েছে। এখনও সুগভীর ষড়যন্ত্র চলছে, এটা আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমি ঐক্যে বিশ্বাস করি, কিন্তু নেতায় নেতায় ঐক্য হয়ে কোনো লাভ নাই যদি কর্মীতে ঐক্য না হয়। নেতায় নেতায় ঐক্যের অভাব ছিল বরিশালে কিন্তু কর্মীতে ঐক্য ছিল বলেই বরিশাল সিটি নির্বাচনে বিজয় পেতে কোনো অসুবিধা হয়নি।
তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ আছি, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ আছে, এখানে যে ফাটল ধরাবার চেষ্টা করবে সে তার ভাগ্য নিজের সাথে নিয়ে যাবে। আমি নেতাদের ঐক্য নয়, কর্মীর ঐক্যে বিশ্বাস করি। কাজেই আসুন আমরা কর্মীদের মাঝে সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের জৈষ্ঠ সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মো. হেলাল উদ্দিন, সহসভাপতি হাজি হেলাল উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবীর, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সাবেক ছাত্র নেতা মঈন উদ্দিন মঈন, বাংলাদেশ আইন সমিতির সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান আনসারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল আলম খোকন, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মিনারা আলম, জেলা যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহানুর ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছা সেবকলীগের সভাপতি এডভোকেট লোকমান হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহদাৎ শোভনসহ দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এর আগে জনসভাকে কেন্দ্র করে বিকেল থেকেই শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা মিছিলসহ ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশ স্থলে জড়ো হন। এতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে সমাবেশস্থল।