ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ‘জাল টাকার মহাজন’ খ্যাত বাবুল মিয়া ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গেল দুইমাসে প্রায় পাঁচকোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছড়িয়েছেন তারা। আরও তিন কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
রোববার রাজধানীর লালবাগের কাশ্মীর লেন থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গোয়েন্দারা বলছেন, চক্রটির প্রধান বাবুল মিয়া যে মেয়েকে পছন্দ করতেন তাকেই বিয়ে করতেন। মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে এসব বিয়ে তিনি সহজেই করতে পারতেন। তবে সবই করতেন জাল টাকা দিয়ে। বিয়ের পর স্ত্রীদের জাল টাকার কারবারে নামিয়ে দিতেন।
এই চক্রের মূলহোতা ও মহাজন খ্যাত বাবুল মিয়া, তার স্ত্রী মিনারা খাতুনসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ২৫ কোটি টাকার জাল নোট জব্দ করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে লালবাগের কাশ্মীরিটোলা লেনে একটি জাল টাকার কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। চক্রের বাকি সদস্যরা হলেন- মূল কারিগর সাইফুল ইসলাম, তার স্ত্রী মিলি খাতুন, মহিলা কারিগর আলপনা আক্তার, ইব্রাহিম, আফাজুল ওরফে রাসেল, হাবিবুল্লাহ ও দুলাল হোসেন।
সোমবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের লালবাগ জোনাল টিম লালবাগ থানার কাশ্মীরিটোলা লেন এলাকায় কয়েকজনকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৫ কোটি টাকার জাল নোট জব্দ করা হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা কাশ্মীর লেনের একটি জাল টাকার কারখানার সন্ধান দেয়। তাদের দেখানো একটি ছয়তলা ভবনের ষষ্ঠ তলা এবং তৃতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে জাল টাকা তৈরির একটা ঘরোয়া কারখানা আবিষ্কার করা হয়। সেখানে জাল টাকা তৈরিরত অবস্থায় কারখানার মহাজন বাবুল মিয়া, তার স্ত্রী মিনারা খাতুন, মূল কারিগর সাইফুল ইসলাম, তার স্ত্রী মিলি খাতুন, মহিলা কারিগর আলপনা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি টিনের ট্রাংক এ প্রস্তুত করে রাখা আরও ৮২ লাখ জাল টাকা জব্দ করা হয়।
ডিবিপ্রধান বলেন, ঘরোয়া কারখানা থেকে জাল টাকা তৈরির কাজে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, প্রিন্টার, জলছাপযুক্ত বিশেষ কাগজ, বিভিন্ন রকমের মনোগ্রাম সম্বলিত স্ক্রিন, ডাইস, বিভিন্ন রং এর কালি, কাগজ কাটার যন্ত্র, কাচি, চাকুসহ প্রায় ২ কোটি জাল টাকা তৈরি করার উপযোগী সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। এছাড়া জাল টাকা দোকানে খুচরা বিক্রি করতে গিয়ে যে সমস্ত পণ্য সামগ্রী ক্রয় করা হয় তার মধ্য থেকে কিছু কম দামের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছাও উদ্ধার করা হয়েছে।
মহাজন খ্যাত বাবুল জাল টাকা নিয়ে এ পর্যন্ত ছয়বার ও তার স্ত্রী মিনারা খাতুন তিনবার গ্রেপ্তার হয়েছে জানিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, এই চক্রের সাইফুল ইসলাম দুইবার বিভিন্ন মেয়াদে জেল হাজতে ছিলেন। জামিনে মুক্তি পেতে তাদের লাখ লাখ টাকা খরচ হয়। উচ্চ সুদে ধার নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে আবারো তারা একই কাজে জড়িত হযন।