একদিন পরই উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে লাখো মানুষ। প্রতিদিন ঢাকা ছাড়ছে নগরবাসী। তাই ট্রেনে ঈদযাত্রার চতুর্থ দিন মঙ্গলবারও (২৭ জুন) রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়। কমলাপুরে ভোর থেকেই মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
পবিত্র ঈদুল আজহার আগে শেষ কর্মদিবস ছিল সোমবার (২৬ জুন)। মঙ্গলবার থেকে বন্ধ থাকবে সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিমা, শেয়ারবাজার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তাই গত কয়েকদিনের তুলনায় কমলাপুরে আজ মানুষের চাপ বেশি।
রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, একদিকে ছুটি শুরু অন্যদিকে ট্রেনে নিরাপদ ভ্রমণ হওয়ায় সবাই ঘরে ফিরতে কমলাপুরমুখী হচ্ছেন। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এমন ভিড় হতে পারে বলে জানান তারা। টিকিটবিহীন যাত্রীদের ক্ষেত্রে এবার কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কোনো যাত্রী বিনাটিকিটে স্টেশন এলাকায় প্রবেশ করতে পারছেন না।
আজ প্রায় ৬০ হাজার মানুষ ট্রেনযোগে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। কমলাপুর স্টেশন থেকে লোকাল-আন্তঃনগর মিলে ৫২ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে। এছাড়া রয়েছে এক জোড়া ঈদ স্পেশাল ট্রেন। আর বিমানবন্দর স্টেশন থেকে আরও দুই জোড়া ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে আজ।
এবারের ঈদযাত্রায় এখন পর্যন্ত তেমন নেই কোনো অভিযোগ না এলেও মঙ্গলবার দিনের শুরুর ট্রেন বিলম্ব হওয়া ক্ষোভ জানিয়েছেন যাত্রীরা। কথা হয় ধূমকেতু এক্সপ্রেসে যাত্রী এম জেড আবেদিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, শুনেছি স্টেশনে পৌঁছানোর আগেই ট্রেন এসে টার্মিনালে পৌঁছেছে। সোমবার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পাঠিয়েছি তাদের ট্রেন যথাসময়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছে। যাত্রায় কোনো বিলম্ব হয়নি। তবে আজ প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করছি এখনো ট্রেন আসেনি।
মহানগর প্রভাতীর যাত্রী সাইফ ইসলাম বলেন, অন্যান্য বার অনেক যাত্রীদের অভিযোগ শুনেছি ট্রেন বিলম্ব হয়। আমাদের ট্রেন সঠিক সময়ে স্টেশন ছাড়ছে, এটা বাড়তি আনন্দ যোগাচ্ছে।
ঈদুল ফিতরের মতো এবার ঈদুল আজহাতেও ট্রেনের অগ্রিম টিকিট শতভাগ অনলাইনে বিক্রি করে রেল কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত ১৪ জুন থেকে আন্তঃনগর ট্রেনের ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। রেলওয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৪ জুন দেওয়া হয় ২৪ জুনের টিকিট। একইভাবে ১৫ জুন দেওয়া হয় ২৫ জুনের, ১৬ জুন ২৬ জুনের, ১৭ জুন ২৭ জুনের এবং ১৮ জুন দেওয়া হয় ২৮ জুনের অগ্রিম টিকিট।
এবারও ঈদযাত্রায় আসনবিহীন বা স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি হবে মোট আসনের ২৫ শতাংশ। ঢাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর ও জয়দেবপুর স্টেশন থেকে এসব টিকিট পাওয়া যাবে। শুধু যাত্রা শুরুর দিন আসনবিহীন টিকিট স্টেশনের কাউন্টার থেকে কেনা যাবে। এবার ঈদযাত্রায় ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় ২৯ হাজার আসনের টিকিট বিক্রি হবে। আর কমিউটার ও আন্তঃনগর মিলে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ ঢাকা ছাড়বেন আজ।
এবার ট্রেনের অগ্রিম টিকিট শতভাগ অনলাইনে দেওয়া হলেও টিকিট বিক্রিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। অনলাইনে দুই ভাগে দেওয়া হয় অগ্রিম টিকিট। ঈদযাত্রায় পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করা সব আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট অনলাইনে পাওয়া যায় সকাল ৮টা থেকে। আর দুপুর ১২টা থেকে পূর্বাঞ্চলে চলাচল করা ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, শতভাগ অনলাইনে টিকিট বিক্রি ও ২৫ ভাগ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রির ফলে রেলের লাভ লোকসান বিবেচ্য বিষয় নয়। যাত্রী সাধারণ নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ যাত্রা যেন করতে পারে এটাই আমাদের লক্ষ্য।