দেশত্যাগের পর প্রিগোজিনের প্রথম বার্তা, প্রকাশ্যে এলেন পুতিন

মত ও পথ ডেস্ক

ইভজেনি প্রিগোজিন ও ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি : সংগৃহীত

সশস্ত্র বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর রাশিয়ায় ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের নেতা ইভজেনি প্রিগোজিন এক বার্তায় বলেছেন, তিনি সরকার উৎখাতের জন্য মস্কো অভিমুখে যাত্রা শুরু করেননি। প্রায় ১১ মিনিট স্থায়ী অডিওবার্তায় ওয়াগনার প্রধান বলেন, তার সৈন্যদের দুটি শহরের সামরিক স্থাপনা দখল ও মস্কোর দিকে যাত্রার লক্ষ্য ছিল প্রতিবাদ জানানো, সরকার উৎখাত করা নয়।

প্রিগোজিনের দাবি, রুশ কর্তৃপক্ষ আগামী ১ জুলাই থেকে ওয়াগনার গ্রুপ বন্ধ করে দিয়ে এর সৈন্যদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ওয়াগনার গ্রুপ এর বিরোধী ছিল এবং কমান্ডাররা কেউই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে রাজি হননি।

তিনি আরও বলেন, ওয়াগনার গ্রুপকে সক্রিয় রাখার উপায় বের করতে বেলারুশের নেতা আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো সহায়তা করেছেন।

প্রিগোজিন তার বার্তায় রুশ সেনাবাহিনীর সমালোচনা করে দাবি করেন, ওয়াগনার গ্রুপকে প্রথম আক্রমণের দায়িত্ব দেওয়া হলে অনেক আগেই ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শেষ হয়ে যেতো।

বিদ্রোহের পর প্রথমবার প্রকাশ্যে পুতিন
ক্রেমলিন সোমবার (২৬ জুন) ভ্লাদিমির পুতিনের একটি ভিডিও বক্তব্য অনলাইনে পোস্ট করেছে। ওয়াগনার গ্রুপের ২৪ ঘণ্টার বিদ্রোহের অবসান এবং তাদের নেতা ইভজেনি প্রিগোজিনের রাশিয়া ত্যাগের পর এই প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট পুতিনকে প্রকাশ্যে দেখা গেলো।

ভিডিওতে একটি যুব শিল্প ফোরামে আগত অতিথিদের উদ্দেশ্যে রুশ প্রেসিডেন্টকে ভাষণ দিতে দেখা যায়। এতে তিনি ওয়াগনার গ্রুপ সংশ্লিষ্ট কোনো কথা উল্লেখ করেননি। ভাষণটি কখন রেকর্ড করা হয় তাও স্পষ্ট নয়।

এছাড়া প্রেসিডেন্ট পুতিন এদিন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন বলে ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে ওয়াগনার বিদ্রোহের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়, ইরানি প্রেসিডেন্ট রুশ নেতৃত্বের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছেন।

সংবাদদাতারা বলছেন, পুতিন ও তার সরকার যে স্বাভাবিক কাজকর্ম করে যাচ্ছেন এমন চিত্রই তুলে ধরা হচ্ছে। যে শহরটি ছিল ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহী তৎপরতার কেন্দ্র, সেই রোস্তভ-অন-ডনে ঐক্যের ডাক ও রক্তপাতের বিরুদ্ধে সতর্কবাণী সম্বলিত পোস্টার দেখা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

সরকারি টিভিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগু

ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ অবসান এবং প্রিগোজিনের রাশিয়া ত্যাগের পর সোমবার প্রথমবারের মতো সরকারি টিভিতে দেখা গেছে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুকেও। এসময় তাকে ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ সৈন্যদের পরিদর্শন করতে দেখা যায়। তবে কখন এবং কোথায় এসব ভিডিও ধারণ করা হয়েছে তার কোন আভাস দেওয়া হয়নি।

বিদ্রোহের সময় শোইগুকে ‘অশুভ’ আখ্যায়িত করে তাকে পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছিলেন ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান।

বিবিসির সংবাদদাতা কেলিন ডেভলিন বলছেন, শোইগুর এ সফর যখনই হয়ে থাকুক, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে যে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী তার স্বপদে বহাল রয়েছেন।

ওয়াগনারের বিদ্রোহে পশ্চিম জড়িত নয়: বাইডেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়ায় ওয়াগনার গ্রুপের ব্যর্থ বিদ্রোহের ঘটনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বা তার মিত্ররা কেউ জড়িত ছিল না।

এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে এ ঘটনার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বাইডেন বলেন, পুতিন যেন এ ঘটনার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলো ও ন্যাটোকে দায়ী করার কোনো সুযোগ না পান, আমরা তা নিশ্চিত করেছি। এতেই বিদ্রোহে আমাদের কোনো ভূমিকা ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্র এর আগে বলেছিল, ওয়াগনারের এই বিদ্রোহ ছিল রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি একটি সরাসরি চ্যালেঞ্জ এবং এতে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে তার নেতৃত্বে ফাটল ধরেছে।

ন্যাটো জোটের মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ওয়াগনার গ্রুপের ব্যর্থ অভ্যুত্থান আরও একবার দেখিয়ে দিয়েছে, পুতিন ইউক্রেনে অভিযান চালিয়ে বড় ভুল করেছেন।

ওয়াগনারের বিদ্রোহের ব্যাপারে চীন কয়েকদিন নীরব থাকলেও গত রাতে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়, যা ঘটেছে তা রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।

বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়ার বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী এবং অংশীদার হিসেবে চীন রাশিয়াকে তার জাতীয় স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রয়াসে সমর্থন দেয়।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন