গাড়ি থামাতে বলার পরেও নির্দেশ না মানায় ১৭ বছরের এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা করেছে প্যারিসের পুলিশ। এর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা ফ্রান্স। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে বহু প্রতিবাদকারীকে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২৭ জুন) প্যারিসের ন্যান্টেরে এলাকায় সড়ক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে এক কিশোর গাড়িচালককে দাঁড় করায় পুলিশ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত একটি ফুটেজে দেখা যায়, দুই পুলিশ কর্মকর্তা গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করছেন। তাদের একজন গাড়িচালকের দিকে অস্ত্র তাক করে রেখেছেন। এসময় গাড়িটি চলতে শুরু করলে খুব কাছ থেকে চালককে গুলি করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। ফলে একটু দূরে গিয়েই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে গাড়িটি।
এ ঘটনার পর জরুরি সেবাকর্মীরা গুলিবিদ্ধ কিশোরকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তবে তাদের সব প্রচেষ্টা শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়। মারা যায় ১৭ বছরের ছেলেটি।
এর পরপরই প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন স্থানীয়রা। পুলিশ সদর দপ্তরের বাইরে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, বাসস্টপ ভাঙচুর ও পুলিশের দিকে আতশবাজি নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। জবাবে পুলিশও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ঘটনায় নয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ন্যান্টেরের প্রসিকিউটর অফিস জানিয়েছে, গাড়িচালক কিশোরের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিন বলেছেন, জড়িত দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা দৃশ্যটি ‘অত্যন্ত জঘন্য’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
পুলিশ এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার জীবন হুমকির মুখে ছিল। কারণ অভিযুক্ত কিশোর তাদের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল।
তবে পুলিশের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে তিন আইনজীবীর একটি দল। আইনজীবী ইয়াসিন বোজরোউ স্থানীয় মিডিয়াকে বলেছেন, ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, একজন পুলিশ এক তরুণকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করছেন। এটি বৈধ প্রতিরক্ষা থেকে অনেক দূরের বিষয়। তবু সব পক্ষকেই তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ফ্রান্সে গাড়ি থামানোর সময় পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। গত বছর এ ধরনের ১৩টি মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছিল। আর চলতি বছর এটি দ্বিতীয় প্রাণঘাতী গুলির ঘটনা। এর আগে, ২০২১ সালে গাড়ি থামাতে না চাওয়ায় পুলিশের গুলিতে তিনজন এবং ২০২০ সালে দুজন নিহত হয়েছিলেন।
রয়টার্সের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ ও ২০২২ সালে ফরাসি গুলিতে নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ বা আরব বংশোদ্ভূত।
সূত্র: আল-জাজিরা, রয়টার্স