একমাত্র শিরোপা ২০০৩ সালে। সর্বশেষ ফাইনাল ২০০৫ সালে এবং শেষ সেমিফাইনাল ২০০৯ সালে। এই হলো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সর্বশেষ ৯ আসরে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান। ২০০৯ সালের পর কোনো আসরের সেমিফাইনালে উঠতে না পারায় বাংলাদেশের ফুটবলারদের সামর্থ্য নিয়ে উঠেছিল বড় প্রশ্ন। অবশেষে ১৪ বছর পর সাফের সেমিফাইনালে উঠে সেই সমালোচনার জবাব দিলেন ফুটবলাররা।
বুধবার ভারতের বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে ভুটানকে ৩-১ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে জায়গা করে নেয় শেষ চারে। বাংলাদেশ ১ জুলাই সেমিফাইনাল খেলবে কুয়েতের বিপক্ষে। অন্য সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে লেবানন ও ভারত।
ড্র করলেই সেমিফাইনাল। এমন কি ১ গোলে হারলেও বাংলাদেশের টিকিট নিশ্চিত হতো শেষ চারের। এমন ম্যাচের শুরুটা মোটেও ভালো ছিল না জামাল ভূঁইয়াদের। কিছুটা আত্মবিশ্বাস ও আগোছালো খেলার সুযোগ নিয়ে লিড নিয়েছিল ভুটান। পিছিয়ে পড়ার পরই বদলে যায় লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
মালদ্বীপের বিপক্ষে ১৮ মিনিটে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরেছিল ৪২মিনিটে। তবে ভুটানের বিপক্ষে প্রত্যাবর্তনটা আরো দুর্দান্ত। ১২ মিনিটে সেন্দা দর্জির গোলে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ ম্যাচে ফেরে ২১ মিনিটে। প্রথমবারের মতো একাদশে জায়গা করে নেওয়া মোরসালিনের আরেকটি দুর্দান্ত গোল দেখেছেন দর্শক।
৩১ মিনিটে ফুনস্তো জিগমের আত্মঘাতি গোলে লিড নেয় বাংলাদেশ। মোরসালিনের কাছ থেকে উড়ে আসা বল জামালকে দিতে শট নিয়েছিলেন রাকিব। তবে সেই বল ভুটানের জিগমের গায়ে লেগে জড়িয়ে যায় নিজেদের জালে। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ২-১ ব্যবধানে।
৩৪ মিনিটেই ব্যবধান বাড়িয়ে নিতে পারতো বাংলাদেশ। এবারও সুযোগ এসেছিল রাকিবের সামনে। মোরসালিনের বাড়ানো বল যখন ধরেন রাকিব তখন তার সামনে একা ভুটানের গোলরক্ষক। রাবিক গোলকিপারের পাশ দিয়ে শট নিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় পোস্ট ঘঁষে বল চলে যায় বাইরে।
গোল পেতে এবং ব্যবধান বাড়াতে বেশি সময় নেননি রাকিব। দুই মিনিট পর বক্সের বাইরে ভুটানের ডিফেন্ডার শেরুব দর্জিকে কাটিয়ে রাকিব একাই ঢুকে পড়েন প্রতিপক্ষের বিপদ সীমানায়। ডান পোস্টের কাছ থেকে দুরহ অ্যাঙ্গেলে শট নেন রাকিব। বল দ্বিতীয় পোস্টে লেগে জড়িয়ে যায় জালে। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৩-১ গোলে।
এগিয়ে থেকে বিরতিতে যাওয়ার পরই সেমিফাইনালের চাবিটা হাতের মুঠোয় চলে এসেছিল জামালদের। ১-৩ গোলে পিছিয়ে পড়া ম্যাচে বাংলাদেশের জালে আরো ৩ গোল দিয়ে জিতে যাবে ভুটান তা ছিল প্রায় অসম্ভব। কারণ, বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পর ম্যাচের নেতৃত্বটাই হাতে নিয়ে নেয়। মাঝমাঠকে প্রধান্য দিয়ে বাংলাদেশ চেষ্টা করেছে গোলের সুযোগ তৈরি করতে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে সেভাবে গোলের সুযোগ আসেনি।
বিরতির পরপরই দলে জোড়া পরিবর্তন আনেন কোচ। সোহেল রানার জায়গায় জনি ও রাকিবের জায়গায় রফিকুলকে নামান। এর পর মোরসালিনকে তুলে প্রথমবারের মতো সিনিয়র ফরোয়ার্ড আমিনুর রহমান সজীবকে মাঠে নামান ক্যাবরেরা। এর পর চতুর্থ পরিবর্তন করেন সোহেল রানার জায়গায় রবিউলকে।
দ্বিতীয়ার্ধে ভুটান বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ রক্ষণে হানা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে তপু বর্মনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের রক্ষণ ছিল জমাট। কোন ফাটল ধরাতে পারেননি ভুটানের সবচেয়ে ভয়ংকর ফরোয়ার্ড চেনচো। শেষ ৪৫ মিনিট লিড ধরে রেখে শেষ করে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ চার নিশ্চিত করে। যদিও ইনজুরি সময়ে বাংলাদেশের রক্ষণে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল ভুটানিজরা।
র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকা ভুটান শূন্যহাতেই শেষ করলো এবারের চ্যাম্পিয়নশিপ। ৩ ম্যাচের সবকটি হেরেছে তারা।
বাংলাদেশ একাদশ
আনিসুর রহমান জিকো (গোলরক্ষক), তপু বর্মণ, বিশ্বনাথ ঘোষ, রহমত মিয়া, শেখ মোরসালিন (আমিনুর রহমান সজীব), মোঃ হৃদয়, জামাল ভূঁইয়া, সোহেল রানা (জনি), ইশা ফয়সাল (আলমগীর মোল্লা), সোহেল রানা-২(রবিউল) ও রাকিব হোসেন (রফিকুল)।