যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে মুসলিম উম্মাহ’র অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ঈদের জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করছেন।
প্রায় ৪ হাজার বছর আগে মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহীম (আ.) নিজ পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)’কে কোরবানি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকেন।
আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য মহান আল্লাহ কোরবানি ফরজ করে দিয়েছেন। এ জন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানি করাই এ দিনের উত্তম ইবাদত। সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতেই মসজিদে মসজিদে সমবেত হওয়া শুরু করেন এবং ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করেন। নামাজের খুতবায় খতিব তুলে ধরেন কোরবানির তাৎপর্য। তবে এবার করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব-মন্দা পরিস্থিতিতে ভিন্ন পরিবেশে কোরবানির ঈদ হওয়ায় অন্যান্য বারের চেয়ে পশু কোরবানি কিছুটা কম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও পরের দুই দিনও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য কোরবানি ফরজ হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দুস্থরাও বঞ্চিত হবেন না। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কোরবানি দেওয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের মুসলমানদের আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। ‘আজহা’ অর্থ কোরবানি বা উৎসর্গ করা। মহান আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) কে কুরবানি করতে উদ্যত হয়ে হযরত ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, অবিচল আনুগত্য ও অসীম আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন- তা ইতিহাসে অতুলনীয়।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, কোরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।
প্রধানমন্ত্রী পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতবারের মতো এবারও করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপন করছেন মুসলমানরা। পশু কোরবানির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নির্দেশনাও রয়েছে।