হলি আর্টিসান হামলা : আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষ হতে পারে এ বছরই

মত ও পথ ডেস্ক

হলি আর্টিজান হামলা
হলি আর্টিজান হামলা। ফাইল ছবি

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে। ঘটনার সাত বছরের মাথায় আলোচিত সন্ত্রাসী হামলার নৃশংস ঘটনায় দ্বিতীয় ধাপের বিচারের অপেক্ষায় পুরো জাতি।

হাইকোর্টের বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে আলোচিত এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে। এরপর গত ৩, ১৫, ১৭ ও ১৮ মে শুনানি হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে রয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ। গত ২১ মে পরবর্তী শুনানির দিন ছিল। কিন্তু বেঞ্চের এক বিচারপতি হজে যাওয়ায় শুনানি মুলতবি রয়েছে।

এর আগে গত জানুয়ারিতে মামলাটির নিষ্পত্তির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তারই ধারাবাহিকতায় হলি আর্টিসানের এ মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু মামলাটির শুনানি শুরু হয়েছে, ফলে চলতি বছরেই হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলার ঘটনায় আলোচিত মামলায় ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) এবং আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শেষ হতে পারে। সেই হিসেবে চলতি বছরেই হলি আর্টিসানের জঙ্গি হামলার ঘটনায় করা মামলার দ্বিতীয় ধাপের বিচার শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, আপনারা জানেন আলোচিত জঙ্গি হামলার ঘটনায় ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) এবং আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে। কিন্তু বেঞ্চের এক বিচারক হজে যাওয়াই শুনানি মুলতবি রয়েছে। তিনি ফিরে আসলে জুলাইয়ে আবারও শুনানি হবে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি জুলাই মাসের শেষ দিকে হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলার ঘটনায় আলোচিত মামলায় ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) এবং আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শেষ হতে পারে। আশা করছি দণ্ডিত আসামিদের সাজা যেন বহাল থাকে। যেহেতু মামলাটি দেশে এবং বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, ফলে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে বিশ্ববাসী দেখবে জঘন্য এ হত্যাকাণ্ডের বিচার।

আলোচিত এ মামলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত করা হলেও করোনা মহামারির কারণে এই মামলার শুনানির উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন আশা প্রকাশ করেছিলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চাঞ্চল্যকর এই মামলার ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলতি বছরই (২০২৩ সালে) শুরু করা সম্ভব। তারই ধারাবাহিকতায় মামলাটি প্রধান বিচারপতির নির্ধারণ করে দেওয়া বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতের নৃশংস সেই হামলা-হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০১৯ সালের নভেম্বরে বিচারিক (নিম্ন) আদালতে সাত জঙ্গির ফাঁসির রায় হয়। এরই মধ্যে আলোচিত এ ঘটনার সাত বছর পেরিয়ে গেছে। বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার নিষ্পত্তি থমকে ছিল।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, হলি আর্টিসানে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনায় করা মামলায় সাত জঙ্গির ফাঁসির রায় হয়। ওই রায়কে আমরা সমর্থন করে আদালতে বক্তব্য রাখবো। কারণ রায়টি সঠিক রায়, জঙ্গিদের যে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে সেটা সঠিকভাবেই দিয়েছেন বিচারিক আদালত।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় ঘটে নারকীয় জঙ্গি হামলা। জঙ্গিরা দেশি-বিদেশি নাগরিকসহ ২৩ জনকে হত্যা করেন। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালির নাগরিক, ৭ জন জাপানি, একজন ভারতীয় এবং একজন বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক। বাকি দুজন ইশরাত আকন্দ ও ফারাজ আইয়াজ হোসেন বাংলাদেশি নাগরিক। হামলা প্রতিরোধে গিয়ে বোমার আঘাতে নিহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন। পরে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন ছয় জঙ্গি এবং একজন ধরা পড়েন।

ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় মামলা করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস। ওই মামলার তদন্ত চলাকালে একের পর এক অভিযানে ধরা পড়তে থাকেন অনেক জঙ্গি। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। একই বছরের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান।

এ মামলার বিচার শুরুর সময় আট আসামির ছয়জন কারাগারে ছিলেন। বিচার চলাকালে বাকি দুইজন গ্রেফতার হন। আসামিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(২)(অ), ৭, ৮, ৯, ১১, ১২ ও ১৩ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়। মোট ২১১ জন সাক্ষীর ১১৩ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন এবং রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর এ মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। ওইদিনই আদালত রায় ঘোষণার জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। পরে রায়ে মামলার আট আসামির সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ এবং মামুনুর রশিদ রিপন।

এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।

একই বছরের (২০১৯ সালের) ৩০ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৭ আসামির ডেথ রেফারেন্স ও মামলার যাবতীয় নথি হাইকোর্টে আসে। এসময় আসামিরা জেল আপিল ও আপিল আবেদন করেন। এরপর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার পেপারবুক প্রস্তুতের নির্দেশ দেন।

শেয়ার করুন