ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন ছেড়ে যেতে শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনারা। সামরিক অভিযানের নামে ১২ ফিলিস্তিনিকে হত্যার পর সেখানকার শরণার্থী শিবির থেকে সরে যেতে শুরু করেছে তারা।
যদিও জেনিনজুড়ে এখনও গোলাগুলি এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। বুধবার (৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবির থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করতে শুরু করেছে বলে ইসরায়েলি একটি প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে। এতে করে পশ্চিম তীরের এই অঞ্চলে দুই দিনের ব্যাপক ওই অভিযান শেষ হতে চলেছে যেখানে ইসরায়েলি হামলায় ১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
অবশ্য ইসরায়েলি বাহিনীর সরে যাওয়ার খবর প্রকাশের সাথে সাথে জেনিনজুড়ে এখনও গোলাগুলি এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একজন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এবং বিমান হামলায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর আগে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বলেছিল, জেনিন শরণার্থী শিবিরে সামরিক অভিযানের জবাবে ইসরায়েলে মানুষের ওপর গাড়ি উঠিয়ে এবং ছুরিকাঘাত করে হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তেল আবিবের একটি ব্যস্ত রাস্তায় ওই হামলায় সাতজন আহত হয়েছেন এবং হামলাকারী পশ্চিম তীরের একজন ফিলিস্তিনি ব্যক্তি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন: ‘কেউ যদি মনে করে, এই ধরনের হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখবে, তাহলে তারা ভুল ভাবছে।’
তিনি নিশ্চিত করেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী জেনিনে ‘মিশন সম্পূর্ণ করছে’। তবে তিনি এটিও সতর্ক করে দিয়েছেন যে, তাদের এই ধরনের অভিযান ‘এককালীন কোনো পদক্ষেপ’ হবে না।
অবশ্য ফিলিস্তিনি নেতারা ইসরায়েলকে আক্রমণ করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
বিবিসি বলছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গত সোমবার ভোরে জেনিন শরণার্থী শিবিরে ড্রোন হামলার মাধ্যমে তাদের অভিযান শুরু করে। ইসরায়েলের ভাষ্য, এই অভিযানের মাধ্যমে ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা’ লক্ষ্য করে হামলা চালানো হচ্ছে।
তবে ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ফিলিস্তিনের নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে আবারও নতুন করে যুদ্ধাপরাধ করছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘ বলেছে, জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের প্রভাব নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। অভিযানের কারণে শরণার্থী শিবিরের বড় এলাকাজুড়ে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এজন্য যারা ক্যাম্প ছেড়ে চলে যেতে চাইছে তারা ঘর থেকে বের হতে পারছে না বলেও জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
প্রায় ১৪ হাজার ফিলিস্তিনির বাসস্থান এই জেনিন ক্যাম্পটির ওপর ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এরপর সেখানে স্থলপথে হাজার হাজার সৈন্যও পাঠিয়েছে তারা। আর এর জেরে দুইদিন ধরে জেনিনের রাস্তায় রাস্তায় বন্দুক-যুদ্ধ হয়েছে।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন দাবি করেছিলেন, তাদের লক্ষ্যবস্তু সাধারণ ফিলিস্তিনিরা নয় বরং জেনিনে ও সেখানকার শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত সশস্ত্র গ্রুপগুলো, যারা ইরানের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে।
গত এক বছরের মধ্যে জেনিনের শরণার্থী শিবিরের ওপর একাধিক ইসরায়েলি সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে এবং ইসরায়েলিদের লক্ষ্য করে বেশ কিছু গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে।
এর আগে ২০০২ সালের এপ্রিলে ইসরায়েলি বাহিনী এখানে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান চালিয়েছিল। ওই অভিযানে কমপক্ষে ৫২ জন ফিলিস্তিনি এবং ২৩ ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছিল।
তবে গত দুইদিনে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি শহর জেনিনে ইসরায়েলের ব্যাপক সেনা অভিযানে কমপক্ষে ১২ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ।
আর এর জেরে শহরের শরণার্থী শিবির থেকে কয়েক হাজার মানুষ আতঙ্কে পালিয়ে গেছেন বলে জানা যাচ্ছে।