ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঘরবাড়ি ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা বেশি দরকার। যার যার ঘরবাড়ি সাফ রাখা এবং মশা যাতে না থাকে সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৭৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সোমবার দুপুরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস প্রান্তে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের একটা সমস্যা হচ্ছে যা কিছুই হোক সব দোষ সরকারের। মশা মারে না কেন? কত মশা মারবে? মশার তো প্রজননের হার অনেক বেশি। কিন্তু মশার যেন সেই প্রজনন না হতে পারে সেজন্য যার যার বাড়িঘর সাফ রাখতে হবে। নিজে বাড়িঘর পরিস্কার রাখতে হবে।’
‘সেদিন আমাদের উত্তরের মেয়র বললেন এত বড়লোক বিশাল বিশাল ফ্লাটে থাকে আর তাদের বাড়ির ভেতরে সব মশার প্রজনন ক্ষেত্র, সব তৈরি হয়ে আছে। তারা নিজেরা কিছু পরিষ্কার করবেন না। এটাও সরকার গিয়ে করে দিয়ে আসতে হবে?’
‘যারা ফ্লাটে থাকেন তারা কিন্তু সবাই একটা টাকা কমিটিকে মেইনটেইনের জন্য দিচ্ছে। কিন্তু তারা সেটা পরিষ্কার করবেন না। কে করে দেবে? সরকার গিয়ে করে দেবে! সরকার তো সবার ঘরবাড়িতে গিয়ে গিয়ে পরিষ্কার করে দিয়ে আসতে পারে না।’
স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা যার যার নিজের ব্যাপার মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজেকেই সচেতন থাকতে হবে। যারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে না সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। নিজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। স্বাস্থ্যা-সুরক্ষা মেনে চলতে হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা এখন কমিউনিটি ক্লিনিকে যেমন ৩০ প্রকার ওষুধ দিচ্ছি সেইসঙ্গে আমাদের কিন্তু ইনসুলিনও দেওয়া শুরু হয়েছে বিনা মূল্যে। অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’
সচেতনতা তৈরিতে চিকিৎসকদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের সকলে যেনো স্বাস্থ্যে সম্পর্কে আরও সচেতন হয়। সেই সচেতনতা কিন্তু আপনাদের দ্বায়িত্ব। ডাক্তারদের দায়িত্ব। আপনারা একটু সচেতনতা সৃষ্টি করেন, মানুষকে একটু বুঝিয়ে বলবেন।’
চিকিৎসকদের গ্রামে থাকতে না চাওয়া দুঃখের:
চিকিৎসকরা ঢাকার বাইরে থাকতে চান না আর সেটিও দুঃখের বিষয় বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি গ্রাম বা উপজেলা পর্যায়ে যোগাযোগসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তৈরি হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দঃখের বিষয় সবাই ঢাকাকেন্দ্রিক বেশি থাকতে চান। ঢাকার বাইরে কেউ থাকতে চান না। এখন কিন্তু আমাদের প্রত্যেকটা গ্রামে বিদ্যুৎ আছে। প্রত্যেকটা গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। গ্রাম পর্যায়ে ওয়াইফাই কানেকশন আছে।
‘গ্রামে এখন সব রকমের ব্যবস্থা আছে। আর আমরা সেই সঙ্গে সঙ্গে অনেক উপজেলায় বাসস্থানের ব্যবস্থাটাও করে দিচ্ছি। কাজেই যারা যখনই যে বিষয়ে দায়িত্ব পাবেন তিনি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত যদি এই সেবা যাতে নিশ্চিত হয় এতগুলো হাসপাতাল এত চমৎকার জায়গা করে দিয়েছি। আর সেখানে যদি যন্ত্রপাতিগুলোও আরেক জায়গায় পড়ে থাকে, সেগুলোর যথাযথ ব্যবহারও হয় না তা দুঃখের।’
‘কাজেই নতুন আধুনিক যে যন্ত্রপাতি আসছে সেগুলো ব্যবহার করার মতো লোক আপনাদের ট্রেনিং দেওয়াতে হবে। প্রয়োজনে দেশে না হোক বাইরের থেকে ট্রেনিং করিয়ে নিয়ে আসতে হবে। সেগুলোর দিকে সবাই একটু দৃষ্টি দেবেন আমি সেটাই চাই।’
সেবাদানের ক্ষেত্রে ঢাকা মেডিকেল কলেজ সর্বসেরা:
প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবাইকে সেবাদানের ক্ষেত্রে ঢাকা মেডিকেল কলেজ সর্বসেরা মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই এই মেডিকেল কলেজ আরও উন্নত হোক সেটাই আমি চাই। ভবিষ্যতে যারা নতুন প্রজন্ম আসবে তারা আরও জ্ঞান সম্পন্ন হবে। প্রয়োজনে আমরা দেশে বিদেশেও শিক্ষা দিয়ে নিয়ে আসবো। ট্রেনিং করাবো।’
‘আরেকটা কাজ মনে হয় করা উচিৎ যে আমরা দরজা বন্ধ করে না রেখে পৃথিবীর বিভিন্ন নামী হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের কিছু দিনের জন্য নিয়ে আসতে পারি। তাদের অপারেশন বা তাদের চিকিৎসা পাশে থেকে দেখলে আমাদের অনেক ডাক্তাররা উপকৃত হবেন, শিখতে পারবেন, জানতে পারবেন।
সীমিত আকারে হলেও এই সুযোগ সৃষ্টি করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিছু বিদেশ থেকে ভালো ডাক্তারদের আনতে পারি। তাতে আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানটা আরও উন্নত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’