ভারতীয় রুপিতে লেনদেন দুদেশের বাণিজ্য বাড়াতে সহায়তা করবে: প্রণয় ভার্মা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, ভারতীয় রুপিতে লেনদেন দুদেশের সামগ্রিক বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করবে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন ও বাংলাদেশ ব্যাংক ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য চালু করতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানটির সহ-আয়োজক ছিলেন হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।

ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে গত এক দশকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে রূপান্তরিত হয়েছে। দুদেশের মধ্যে দৃশ্যত ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের সংযোগ ছিল সেই রূপান্তরের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ।

তিনি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে নতুন উপায় খুঁজে বের করার জন্য উভয় দেশের সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপরও জোর দেন।

ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ভারতীয় রুপিতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিষ্পত্তির জন্য এ নতুন পদ্ধতির সূচনা উভয় দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ প্রচেষ্টার চূড়ান্ত পরিণতি, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করতে, লেনদেনের ব্যয় ও সময় কমাতে, বাণিজ্য নিষ্পত্তির গতি, দক্ষতা ও সুবিধার উন্নয়ন ঘটাতে এবং সেই লক্ষ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ও সামগ্রিক বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করবে। তিনি এটাও স্বীকার করেন যে, স্থানীয় ব্যবসার পক্ষ থেকে দীর্ঘদিনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রক্রিয়াটি চালু করা হয় এবং বিশেষ করে কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্টের (সেপা) প্রেক্ষাপটে, দীর্ঘমেয়াদে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে আরও বৃদ্ধি করার অসাধারণ সম্ভাবনা এর রয়েছে, যার জন্য শিগগিরই আলোচনা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক জটিলতায় বিশ্বের দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে লড়াই করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের সূচনা এ জটিলতাসমূহকে হ্রাস করবে এবং বাণিজ্যিক উন্নয়নের জন্য নতুন পথ উন্মুক্ত করবে। গভর্নর এ নতুন ব্যবস্থাটির সুবিধাসমূহের ওপর গুরুত্ব দেন যাকে তিনি একটি নতুন যাত্রার সূচনা হিসেবে বর্ণনা করেন, যা ব্যবসার জন্য একটি ইতিবাচক মানসিক বিকাশ ঘটাবে। যাতে ভবিষ্যতে বাণিজ্যকে বহুগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়।

ভারত থেকে এ নতুন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের জন্য বর্তমানে নির্ধারিত ভারতীয় ব্যাংকগুলো হলো স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংক। মনোনীত বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো হলো সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড। ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিষ্পত্তির জন্য নির্ধারিত প্রতিটি বাংলাদেশি ব্যাংককে মনোনীত ভারতীয় ব্যাংকগুলোতে একটি স্পেশ্যাল রুপি ভোস্ট্রো অ্যাকাউন্ট (এসভিআরএ) খুলতে হবে৷

আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) বাণিজ্য শুরু করার লক্ষ্যে প্রথম রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকের মধ্যে তাদের ব্যাংকসমূহের মাধ্যমে একটি আনুষ্ঠানিক লেটার অব ক্রেডিট অর্থাৎ এলসি নথিপত্রের বিনিময় করা হয়। বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) প্রথম রপ্তানি করে তামিম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বগুড়া, বাংলাদেশ, যার মূল্যমান ১৬ মিলিয়ন ভারতীয় রুপি (আইএনআর)। ভারতে আইসিআইসিআই ব্যাংক এ আমদানি এলসি খুলে যেখানে এসবিআই বাংলাদেশ ছিল রপ্তানিকারকের ব্যাংক। বাংলাদেশে ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) প্রথম আমদানি করে নিটা কোম্পানি লিমিটেড, ঢাকা, বাংলাদেশ, যার মূল্যমান ১২ মিলিয়ন ভারতীয় রুপি (আইএনআর)। আমদানি এলসিটি বাংলাদেশের এসবিআই ঢাকা শাখা, যার রপ্তানিকারকের (টাটা মোটরস) ব্যাংক হলো এসবিআই সিএজি শাখা, মুম্বাই।

অনুষ্ঠানে ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) বাণিজ্যের পদ্ধতির ওপর এসবিআই-এর কান্ট্রি হেড কর্তৃক উপস্থাপিত একটি সংক্ষিপ্ত প্রেজেন্টেশান অন্তর্ভুক্ত ছিল। অনুষ্ঠানটিতে ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) বাণিজ্য করার জন্য নির্বাচিত চারটি মনোনীত ব্যাংকের প্রধানদের কাছ থেকে সংক্ষিপ্ত ভিডিও বার্তার পাশাপাশি বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়িক চেম্বারসমূহের প্রধানদের সংক্ষিপ্ত ভিডিও কোলাজ থেকে নেওয়া ভিডিও বার্তাও অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা এ নতুন ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারাকে ব্যক্ত করেছে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সেলিম উল্লাহ।

এছাড়া অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- এফবিসিসিআই, আইবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ডিসিসিআই, বিকেএমইএ-এর প্রেসিডেন্ট।

শেয়ার করুন