রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বিএনপি। এ সমাবেশ থেকে সরকার পতনের ‘এক দফা’ ঘোষণা করবে দলটি। অন্যদিকে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে সময় আলাদা। ২৩ শর্তে রাজধানীতে সমাবেশ করতে উভয় দলকেই অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
এদিকে চারদিনের সফরে মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যায় একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকায় এসেছেন বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। উজরা জেয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে ঢাকায় এসেছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার এশিয়া দপ্তরের উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলী কৌর। আর গত রোববার থেকে ঢাকায় অবস্থান করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন বিষয়ক অনুসন্ধানী দল। তাদের সফরের মধ্যেই ঢাকায় আজ সমাবেশের আয়োজন করেছে দল দুটি।
জানা গেছে, বিএনপিকে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করতে বলা হয়েছে। আর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগকে বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ডিএমপি।
এই সমাবেশকে উপলক্ষ্য করে রাজধানীতে বড় ধরনের শো-ডাউন করে নিজেদের শক্তির জানান দিতে চায় বিএনপি। এজন্য গত কয়েকদিন দফায়-দফায় মিটিং করেছেন বিএনপির ঢাকা মহানগরীর নেতারা। সমাবেশে রাজধানীবাসীকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে টানা কয়েকদিন পাড়া-মহল্লায় মাইকিংও করা হয়েছে।
আর বিএনপির এক দফা ঘোষণার প্রেক্ষাপটে আজকের শান্তি সমাবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। সমাবেশে সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি তাদের কর্মসূচিগুলো জনগণকে দেখাতে চায় না, বিদেশিদের দেখাতে চায়। বিদেশিরা তাদের শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে সন্দিহান, তাই তাদের একটু শক্তি দেখানোর চেষ্টা করছে। যা একটি রাজনৈতিক দলের দেউলিয়াত্বকে প্রকাশ করে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ১২ জুলাইয়ে পর চলমান আন্দোলন আরও উচ্চতর গতিতে, বেশি তীব্রতরভাবে এগিয়ে যাবে। পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। সে লক্ষ্যে আমরা এটি যৌথ ঘোষণা দেব। যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীরা একই সময়ে একই ঘোষণা দেবে যার-যার অবস্থান থেকে।
যে ২৩ শর্তে আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে-
১. এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে উল্লেখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
৩. অনুমোদিত স্থানেই সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
৪. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।
৫. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের চারদিকে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে আগতদের হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিং করতে হবে।
৭. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৮. শব্দ দূষণ প্রতিরোধে সীমিত আকারে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে, কোনোক্রমেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
৯. অনুমোদিত স্থানের বাইরে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না।
১০. অনুমোদিত স্থানের বাইরে, রাস্তায় বা ফুটপাতে কোথাও লোক সমবেত হওয়া যাবে না।
১১. আযান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
১২. ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
১৩. সমাবেশের কার্যক্রম ব্যতীত মঞ্চকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
১৪. সমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা পূর্বে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে।
১৫. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫ টার মধ্যে সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
১৬. কোনো অবস্থাতেই মূল সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
১৭. আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।
১৮. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ ও বক্তব্য প্রদান করা যাবে না।
১৯. উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
২০. কোনো ধরনের লাঠি-সোটা /ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না।
২১. আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও কোনো বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন।
২২. উল্লেখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।
২৩. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।