নরসিংদীতে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের মিছিলে দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে দুজন নিহতের ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়েছিলেন। আগামী শনিবার জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। শেষ কার্যদিবস হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নরসিংদী আদালতে আত্মসমর্পণ করে স্থায়ী জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু খায়রুল কবিরের আদালতে প্রবেশ ঠেকাতে স্টেডিয়াম-সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করেন বিএনপির শতাধিক পদবঞ্চিত নেতাকর্মী।
আদালতে যাওয়ার পথে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের বহনকারী তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং অন্তত ১০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় পাঁচজন আইনজীবীকে মারধর করা হয়। সর্বশেষ বেলা দুইটার পর পুলিশের সহযোগিতায় আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন খায়রুল কবির। বেলা তিনটার দিকে তিনি জামিন পান। আহত আইনজীবীরা হলেন আকলিমা আক্তার, জোনায়েদ উল্লাহ, হোসনে মোবারক, আবদুস সাত্তার ও রোকেয়া আক্তার।
জেলা ছাত্রদলের বহিষ্কৃত জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাইন উদ্দিন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত শহরের স্টেডিয়াম-সংলগ্ন সড়কে খায়রুল কবিরের বিরুদ্ধে শুয়ে-বসে কাফনের কাপড় পরে নানা ধরনের স্লোগান দেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। তারা দলে দলে ভাগ হয়ে উপজেলা মোড় থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত লাঠি হাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় জেলা গোয়েন্দা শাখাসহ পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্যকে আদালত ফটকের সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
গত ২৫ মে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শহরের জেলখানা মোড়ে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে ঢোকার পথে দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছাদিকুর রহমান ও তার অনুসারী আশরাফুল হক (২২) নিহত হন। এ ঘটনায় নিহত ছাদিকুরের ভাই আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, তার স্ত্রী শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩৫ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এখন পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত ৯ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির আজ নরসিংদী আদালতে যাতে ঢুকতে না পারেন, সে জন্য বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেন দলটির পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। সেই উপলক্ষে সকাল ৯টার দিকে শহরের উপজেলা মোড় থেকে কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে একদল কিশোর-তরুণ তার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে স্টেডিয়ামের সামনের সড়কে আসেন। সেখানে পাঁচ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে তারা খায়রুল কবিরের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন।
দুপুর ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের বহনকারী দুটি মাইক্রোবাস ও একটি ব্যক্তিগত গাড়ি তাদের সামনে দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তারা বাধা দেন। এ সময় গাড়ি তিনটির সব কটি জানালার কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পরিচয় পেয়ে তাদের পাঁচজনকে কিল-ঘুষি ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। তাদের নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
গাড়ি তিনটির ভেতরে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের অন্তত ৩০ জন আইনজীবী। বেলা ২টার পর পুলিশ সড়কে অবস্থান নেওয়া নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিলে খায়রুল কবির আদালত চত্বরে প্রবেশ করেন। পরে শুনানি শেষে বেলা ৩টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ মোশতাক আহম্মেদের আদালত তাকে জামিন দেন।