প্রবল বৃষ্টির জেরে সৃষ্ট বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে উত্তর ভারত কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি দিল্লিতে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে এবং এই নদীর উপচে পড়া পানি দিল্লির প্রধান প্রধান রাস্তাগুলোতেও পৌঁছে গেছে।
এছাড়া বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় ভারতের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার শত শত মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) পৃথক দুই প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এবং সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, অতি বৃষ্টির জেরে প্লাবিত হয়েছে দিল্লির যমুনা নদী। তার ওপরে বিপদ বাড়িয়েছে প্রতিবেশী রাজ্য হরিয়ানা। পাশ্ববর্তী ওই রাজ্য থেকে পানি ছাড়তেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে যমুনা নদীর পানি। পরিস্থিতি এতোটাই ভয়ঙ্কর যে, নদীর পানি দিল্লির রাস্তায় উঠে এসেছে।
এনডিটিভি বলছে, যমুনা নদীর ক্রমবর্ধমান পানি উত্তর দিল্লির একটি প্রধান সড়ককে প্লাবিত করেছে। দিল্লির সুপরিচিত রিং রোডও মঠ এবং কাশ্মিরি গেটের কাছে নিমজ্জিত হয়ে গেছে, আইটিও-তেও প্লাবিত হয়েছে। এই সড়কটি পূর্ব দিল্লি থেকে মধ্য দিল্লিতে যাতায়াতের কয়েকটি রুটের মধ্যে একটি এবং শহরের কেন্দ্রস্থল বলে পরিচিত।
এছাড়া বুধবার রাত ১১টায় যমুনা নদীর পানির স্তর সর্বকালের সর্বোচ্চ ২০৮.০৮ মিটারে উঠে যায়। এর পূর্ববর্তী রেকর্ড ছিল ১৯৭৮ সালে ২০৭.৪৯ মিটার। ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮-১০ টার দিকে যমুনায় পানির প্রবাহ হবে সর্বোচ্চ। অবশ্য দুপুর ২টার দিকে তা নামতে শুরু করবে।
এদিকে পৃথক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ভারতের রাজধানী দিল্লিতে শত শত বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, যমুনার পানি গত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং ইতোমধ্যেই ‘বিপৎসীমা’ ছাড়িয়ে গেছে।
গত জুন মাসে শুরু হওয়া বর্ষা মৌসুমে এখনও পর্যন্ত দিল্লির কাছাকাছি রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত মাসের শেষের দিকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে হিমাচল প্রদেশে অন্তত ৮৮ জন লোক মারা গেছেন।
বুধবার দিল্লিতে নদীর পাশের অস্থায়ী বাড়িতে বসবাসকারী লোকেরা শহরে স্থাপিত ২৫০০টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘পানির স্তর ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বন্যার মতো পরিস্থিতি রয়েছে। পানির স্তর ‘আরও বাড়তে পারে’।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বুধবার রাজ্যের সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছেন। যারা নীচু জায়গায় থাকেন, তাদের দ্রুত ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতেও অনুরোধ করেন তিনি। এছাড়া বন্যা পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় তার জন্য গতকালই তিনি জরুরি বৈঠকে বসেন।
মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল অনুরোধ করেন, যমুনা নদীর পাড়ে নীচু এলাকাগুলোতে যারা বসবাস করেন, তারা যেন দ্রুত এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় অস্থায়ী তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেখানেই সাধারণ মানুষকে আশ্রয় নিতে অনুরোধ করেন তিনি।
একইসঙ্গে তিনি সকলের কাছে বন্যার পানি দেখতে না যাওয়ার অনুরোধ করেন। কারণ যমুনা নদীর পানির স্তর অত্যন্ত দ্রুত হারে বাড়ছে। ফলে যেকোনো সময়ে বিপত্তি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যমুনা নদীর আশপাশে ছয়টি ত্রাণ শিবির তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কাছেও সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া প্রয়োজনে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া ওবং সেই স্কুলগুলোকে ত্রাণ শিবির বানাতে সকল জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল।