সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় ধর্মীয় বিদ্বেষ ও গোঁড়ামি বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল (ইউএনএইচআরসি) একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
বুধবার (১২ জুলাই) ‘বৈষম্য, শত্রুতা ও সহিংসতা উদ্রেককারী ধর্মীয় ঘৃণার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’ মর্মে প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয়। প্রস্তাবের সপক্ষে ছিল বাংলাদেশসহ আরও ২৮ রাষ্ট্র। বিপক্ষে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্সসহ ১২ দেশ।
প্রস্তাবটি অনুমোদনে অনুপস্থিত দেশের সংখ্যা ৭টি। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নও প্রস্তাবটির বিরোধিতা করে। জানায়, এটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। খবর আলজাজিরার।
ঈদুল আজহার ছুটিতে কোরআন অবমাননার ঘটনাটি ঘটে। এ সময় স্টকহোমের প্রধান মসজিদের বাইরে এক ইরাকি অভিবাসী কোরআন পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেন।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার বিশেষ বৈঠক শুরু হয়েছে জাতিসংঘে। পাকিস্তানের আহ্বানে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ে বৈঠকটি শুরু হয়।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেই বৈঠকে যোগ দেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ইসলামবিদ্বেষ, ঘৃণাত্বক বক্তব্য আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশ্বজুড়ে মানুষে মানুষে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে তুলছে। সহিংসতা উসকে দিচ্ছে।’
বৈঠকে মুসলিম বিশ্বের প্রতিনিধিরা বলেন, পবিত্র কোরআন মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত আবেগের বিষয়। কোরআন পোড়ানো মুসলিমদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে। এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
ইউএনএইচআরসি’র প্রধান ভলকার টার্ক বলেছেন, ‘মুসলিমবিদ্বেষ, ইসলামবিদ্বেষ, ইহুদিবিদ্বেষ কিংবা খ্রিস্টানদের নিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ আলোচনা, শিক্ষা এবং ধর্মীয় আদান-প্রদানের মাধ্যমে ঘৃণাত্বক মন্তব্য বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করেন টার্ক।
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বলেন, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অপব্যবহার বন্ধ করুন।’
সুইডেন সরকার কোরআন পোড়ানোর ঘটনাকে ‘ইসলামোফোবিক’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। বলেছে, সুইডেনে ‘সমাবেশ, মতপ্রকাশ ও বিক্ষোভের স্বাধীনতার অধিকার সংবিধানে সুরক্ষিত আছে।’
প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে যেসব দেশ
আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ,, বলিভিয়া, ক্যামেরুন, চীন, কিউবা, ইরিত্রিয়া, গ্যাবন, গাম্বিয়া, ভারত, আইভরি কোস্ট, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মালাবি, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, পাকিস্তান, কাতার, সেনেগাল, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনাম।
প্রস্তাবের বিপক্ষে যারা ভোট দিয়েছে
বেলজিয়াম, কোস্টারিকা, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মন্টিনিগ্রো, রোমানিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র।
ভোটদানে বিরত ছিল যারা
বেনিন, চিলি, জর্জিয়া, হন্ডুরাস, মেক্সিকো, নেপাল ও প্যারাগুয়ে।