চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ভেতর চলতে হলে কোন গাড়িকে কত টোল দিতে হবে, তা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ। এই গেজেট অনুযায়ী টানেল পার হতে হলে গাড়িভেদে সর্বনিম্ন দুই শ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা টোল দিতে হবে।
টানেলের ভেতর দিয়ে ১২ ধরনের যানের জন্য টোলের হার চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত বছরের ২০ ডিসেম্বর টোলের হার প্রস্তাব করেছিল সেতু কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাবিত টোলের হারে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। টানেলের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল বা দুই চাকার কোনো যান চলাচল করতে পারবে না।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দুটি টিউব বা সুড়ঙ্গের মধ্যে দক্ষিণ সুড়ঙ্গের (টিউব) পূর্তকাজ শেষ হয়েছে। এই সুড়ঙ্গ চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে নগরের পতেঙ্গা প্রান্ত পর্যন্ত। টানেলের বর্তমান অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ। এর মধ্যে পূর্তকাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক কাজ চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরে টানেল চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের নির্মাণকাজ শুরু হয়।
সেতু কর্তৃপক্ষের উপসচিব মো. আবুল হাসান স্বাক্ষরিত গেজেট অনুযায়ী, টানেলের ভেতর দিয়ে চলতে হলে কার ও জিপকে দিতে হবে ২০০ টাকা। একই হারে টোল দিতে হবে পিকআপকে। আর মাইক্রোবাসকে পরিশোধ করতে হবে ২৫০ টাকা। বাসের ক্ষেত্রে ৩১ আসন বা এর কম আসনের গাড়িকে দিতে হবে ৩০০ টাকা, ৩২ আসন বা এর বেশি বাসগুলোকে পরিশোধ করতে হবে ৪০০ টাকা। বাসের (৩ এক্সেল) জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা।
এ ছাড়া ৫ টনের ট্রাকের জন্য ৪০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকের জন্য ৫০০ এবং ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাকের জন্য ৬০০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।
টানেলের ভেতর দিয়ে যেতে হলে ৩ এক্সেলের ট্রাক বা ট্রেইলরকে দিতে হবে ৮০০ টাকা। ৪ এক্সেলের ট্রাক বা ট্রেইলরের জন্য ১০০০ টাকা। ৪ এক্সেলের বেশি হলে প্রতি এক্সেলের জন্য বাড়তি ২০০ টাকা করে দিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, টানেল চালু হওয়ার পর ২০২৫ সালে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। এ ছাড়া ২০৩০ সালে যানবাহন চলাচলের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সালে যানবাহনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ৬২ হাজার।
টানেল প্রকল্পের নথিপত্র অনুযায়ী, টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠবে। টানেল চালু হলে শিল্পায়ন, পর্যটনশিল্পের বিকাশ এবং সহজ যোগাযোগব্যবস্থার কারণে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। ফলে দারিদ্র্য দূরীকরণসহ দেশের ব্যাপক আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধিত হবে। এ ছাড়া জিডিপিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।