দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডেঙ্গুর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ১০ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে ও ৯ জুলাই স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভাগুলোতে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পদক্ষেপগুলো হলো—
১. সব সরকারি হাসপাতালে ১০০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকায় ডেঙ্গু পরীক্ষা করা যাবে। ২. সরকারি সব হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া ও ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।
৩. ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট বিতরণ, টিভিতে স্ক্রল, রেডিও বার্তা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার–প্রচারণা বাড়ানো হয়েছে। ৪. ঢাকা শহরে ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গু রোগীর সেবা নিশ্চিত করতে মহাখালীর ৮০০ শয্যাবিশিষ্ট ডিএনসিসি হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়েছে।
৫. সব হাসপাতালে চিকিৎসকদের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যু কমাতে হালনাগাদ ডেঙ্গু চিকিৎসা গাইডলাইন সরবরাহ করা হয়েছে। ৬. স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ৭. জরুরি প্রয়োজনে স্বাস্থ্যসেবা পেতে ১৬২৬৩ হটলাইন সেবা চালু রয়েছে।
গত বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিশেষ সতর্কবার্তায় ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার ওপর নজর দিতে হবে। জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সম্পর্কে বার্তায় উল্লেখ করা হয়, তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরের পেশি ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, বমি বমি ভাব, নাসিয়া গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া, শরীরে র্যাশ ওঠা, শরীরে লালচে দানা, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে খাবারের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে বার্তায় বলা হয়, জ্বর হলে বেশি বেশি তরল খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের রস ও স্যুপ খেতে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধের বিষয়ে বার্তায় বলা হয়েছে, ঘর বা কর্মস্থলের জানালা সব সময় বন্ধ রাখতে হবে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে যতটা সম্ভব শরীর ঢেকে রাখতে পারে— এমন পোশাক পরতে হবে। দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। পরিবার, প্রতিবেশী ও কমিউনিটির মধ্যে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে। পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সবাইকে সরাসরি যুক্ত হতে হবে।
মশার প্রজনন রোধে করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, ঘরে ও আশপাশের যেকোনো পাত্রে বা জায়গায়, মাঠ বা রাস্তায় পানি জমতে দেওয়া যাবে না। ব্যবহৃত পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে তা ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা বা নারকেলের মালা, কনটেইনার, মটকা, ব্যাটারি সেল, ফ্রিজে জমে থাকা পানি তিন দিনের মধ্যে ফেলে দিতে হবে।
ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে কাছের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দ্রুত যেতে হবে বলে বিশেষ বার্তায় পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে আরও বলা হয়, ডেঙ্গু নিয়ে যেন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক না ছড়ায়। সাধারণ চিকিৎসাতেই এই জ্বর সেরে যায়। তবে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ও ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর মারাত্মক হতে পারে।