গেলো সপ্তাহজুড়ে শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে, বেড়েছে তার থেকে তিনগুণ বেশি। এরপরও সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বড় অঙ্কে কমে গেছে। তবে বেড়েছে সবকটি মূল্য সূচক। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি কমেছে। বিপরীতে দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ। আর ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে দশমিক ১০ শতাংশ।
এদিকে, দাম বাড়ার তালিকা বড় হলেও গত কয়েক মাসের মতো তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা সংকট ছিল গত সপ্তাহজুড়েও। ফলে প্রায় দুইশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
এমন বাজারে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১০ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে।
এদিকে, সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৭০টির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩টির। আর ১৯৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৬ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বা দশমিক ১০ শতাংশ। এর মাধ্যমে টানা তিন সপ্তাহ ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক বাড়লো। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৫ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট বা দশমিক ২৫ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ৩৯ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৬২ শতাংশ।
প্রধান মূল্য সূচকের সঙ্গে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও টানা তিন সপ্তাহ বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে সূচকটি বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট বা দশমিক ২৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৩ দশমিক ৭২ পয়েন্ট বা দশমিক ১৭ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ৫ দশমিক ২৪ পয়েন্ট বা দশমিক ২৪ শতাংশ।
ইসলামী শরীয়াহভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও টানা তিন সপ্তাহ বেড়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি বেড়েছে ৪ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট বা দশমিক ১৮ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ৭ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৫ শতাংশ।
সবকটি মূল্য সূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৫১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৭১৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা বা ১৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ২৫৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ৩ হাজার ৫৮৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৬৭১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বা ১৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩২৪ কোটি ৬৬ লাখ ১২ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লুব-রেফ বাংলাদেশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৭২ কোটি ৪৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা। ১৪১ কোটি ৩২ লাখ ১ হাজার টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, জেনারেশন নেক্সট, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফু-ওয়াং ফুড, এডিএন টেলিকম এবং খান ব্রাদার পিপি ওভেন ব্যাগ।