দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি শর্ত এবং বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। সম্প্রতি রাজধানীর একটি সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের পদত্যাগের ‘একদফা’ দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে একইদিনে আরেকটি সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়েছেন সংবিধান মেনে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একই ইস্যুতে বৃহৎ দুই দলের বিপরীত মেরুতে অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ প্রবলভাবে উত্তপ্ত করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমরা মনে করি, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো শর্তহীন সংলাপ। এর কোনো বিকল্প নেই। তাই সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার পূর্বেই উভয় দলকে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে এবং এর সমাধান সংবিধানের ভেতর থেকেই খুঁজে বের করতে হবে।
এদিকে পরিস্থিতি প্রশমিত করতে দূতিয়ালির ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা এদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চান বলে জানিয়েছেন। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো মৃত ইস্যুতে কোনো মন্তব্য করেননি। যারা নির্বাচন বয়কট কিংবা প্রতিহতের হুঙ্কার দিচ্ছে তাদের মনে রাখা উচিত, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বা অংশগ্রহণ না করার সঙ্গে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা বিএনপি কিংবা সমমনা দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণই নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া বা না হওয়ার মানদণ্ড নয়। কাজেই বিএনপি কিংবা সমমনা দলগুলোর উচিত হবে না, নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়ে ২০১৪ সালের মতো আরেকটি ভুল করা। সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তাদের যদি কোনো দাবি-দাওয়া থাকে সেগুলো নিয়ে একটি রাজনৈতিক সংলাপ হতে পারে। কিন্তু তারা যদি নির্বাচন বর্জন করে অতীতের মতো দেশজুড়ে হরতাল-অবরোধের নামে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের পথ বেছে নেয়, তবে তারা জনসমর্থন হারাবে এবং নিজেদের কবর নিজেরাই রচনা করবে।
সবশেষে বলতে চাই, বাইরের কোনো রাষ্ট্র বা সংস্থার চাপের কারণে নয়, আমাদের আত্মমর্যাদা বাড়ানোর স্বার্থেই সহনশীলতার রাজনীতির চর্চার পাশাপাশি সংবিধান মোতাবেক দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান জরুরি; যেখানে প্রধান ভূমিকা পালন করবে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে অবশ্যই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলগুলোকে।