নির্বাচনে পুনরায় জয়লাভের পর উপসাগরীয় ৩টি দেশে সফর শুরু করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এ লক্ষ্যে সোমবার (১৭ জুলাই) সৌদি আরবে পৌঁছেছেন তিনি। সেখানে তিনি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত আলোচনা এবং ফোরামে অংশ নিয়েছেন।
এরপর কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) উদ্দেশে রওনা করবেন তিনি। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপসাগরীয় তিনটি রাষ্ট্র সফরের শুরুতে সোমবার সৌদি আরবে পৌঁছেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। পূর্ববর্তী সফরের এক বছরেরও বেশি কিছু সময় পর তিনি ফের মধ্যপ্রাচ্যের ধনী এই দেশটিতে সফরে গেলেন এবং এর মাধ্যমে তিনি মূলত তার দেশের সংকটাপন্ন অর্থনীতিতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে চাইছেন।
আল জাজিরা বলছে, সোমবার সৌদি আরবের লোহিত সাগরের তীরবর্তী জেদ্দা শহরে অবতরণ করেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। এই সফরে তিনি সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ এবং দেশটির ডি ফ্যাক্টো বা ‘প্রকৃত’ শাসক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে দেখা করবেন।
পরে সেখান থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের উদ্দেশে যাত্রা করবেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।
সৌদি আরবের রাষ্ট্র পরিচালিত আল এখবারিয়া টিভি তুর্কি প্রেসিডেন্টের সৌদি-তুর্কি ব্যবসায়িক ফোরামে উপস্থিত হওয়ার ফুটেজ সম্প্রচার করেছে। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতারে তার সফরের সময় অনুরূপ ব্যবসায়িক ফোরামের পরিকল্পনাও করা হয়েছে।
সোমবার ইস্তাম্বুল ছাড়ার আগে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ‘সফরের সময় আমাদের প্রাথমিক এজেন্ডা হবে আগামী দিনগুলোতে এই দেশগুলোর সাথে যৌথ বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম।’
তিনি বলেন, গত ২০ বছরে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়িক ফোরাম আয়োজনের পাশাপাশি আমরা এই পরিসংখ্যান আরও অনেক বেশি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজব।’
সম্পর্ক মেরামত
আল জাজিরা বলছে, ২০১৮ সালে সৌদি আরবের ইস্তাম্বুল কনস্যুলেটে সৌদি এজেন্টদের হাতে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। তবে এরপর গত কয়েক বছরে উভয় দেশের মধ্যে প্রীতির সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে।
আর সম্পর্কের পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর সৌদি আরবে এটি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের দ্বিতীয় সফর। এরদোয়ান এর আগে সর্বশেষ ২০২২ সালের এপ্রিলে সৌদি আরব সফর করেছিলেন।
২০১৮ সালে ইস্তাম্বুল কনস্যুলেটের ভেতরে সৌদি এজেন্টরা সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার ঘটনায় তুরস্ক ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানায় এবং জোরালো ভূমিকা গ্রহণ করে। তুরস্ক এই ঘটনায় সেসময় তদন্ত শুরু করে এবং হত্যার লোমহর্ষক বিবরণ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশ করে। আর এই ঘটনা সৌদি আরবকে ক্ষুব্ধ করেছিল।
কিন্তু সম্পর্ক ফের উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে এরদোয়ান গত বছরের এপ্রিল মাসে সৌদি আরব সফর করেন এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও গত বছরের জুনে তুরস্ক সফর করেন। এরপর চলতি বছরের মার্চে তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জমা করে সৌদি আরব।
মূলত সম্প্রতি তুরস্কের মুদ্রা লিরার মানের পতন হয়েছে এবং দেশটি ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আর এটিই পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটির অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আর এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সৌদি সফর করছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।