২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৫ হাজার ২৬৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিএনসিসির বাজেট ছিল ৫ হাজার ৪৮ কোটি ৫ লাখ টাকা, পরে সংশোধিত বাজেট হয় ২ হাজার ৯৫০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
আজ সোমবার গুলশানে ডিএনসিসি নগরভবনের হল রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে এবার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশে ডিএনসিসিকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অনুসরণ করে ডিএনসিসির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিএনসিসির রাজস্ব অর্জন হয়েছে ১ হাজার ৬২ কোটি ৩৫ লাখ ৬২ হাজার ১০৩ টাকা। এটি উত্তর সিটি করপোরেশনের সক্ষমতার প্রমাণ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয় ১৮৩০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ধরা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১৮৬ কোটি ৯৮ লাথ টাকা বেশি। আমি আশা করছি এ বছরে হোল্ডিং ট্যাক্স, বাজারের সালামি, ট্রেড লাইসেন্স ফি, সম্পত্তি হস্তান্তর ও সড়ক খনন ফি বাবদ আয় বৃদ্ধি পাবে।
অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স ফি সংগ্রহের ফলে এরই মধ্যে রাজস্ব উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে জানিয়ে মেয়র আতিক বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং পাবলিক সার্ভিস নিশ্চিত করতে অনলাইনে সেবার পরিসর বৃদ্ধি করা হচ্ছে। রাজস্ব বাড়াতে আরও কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। স্মার্ট পার্কিং ও রিকশায় কিউআর কোড সম্বলিত নম্বর প্লেট সরবরাহের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া কোরবানির পশুর হাটের ইজারা বাবদ বিগত সময়ের চেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণ হবে। বলাবাহুল্য নতুন ওয়ার্ড গুলোতে হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট করা হলে ভবিষ্যতে গৃহকর বাবদ রাজস্ব আয় অনেক বেড়ে যাবে।
মেয়র বলেন, পরিবেশবান্ধব, নান্দনিক ও সুন্দর সবুজ নগরী গড়ার প্রত্যয়ে সাজানো হয়েছে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট। প্রতিটি খাতে আধুনিকায়ন ও অনলাইনভিত্তিক সেবাদানে জোর দেওয়া হয়েছে। এ বাজেট সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিএনসিসির অর্থনীতি আরও শক্তিশালী ও বেগবান হবে। নগরবাসীর জন্য বহুমুখী মানসম্মত সেবা নিশ্চিত হবে।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আমরা বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়েছি। মশক নিয়ন্ত্রণের জন্য ও আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বাজেটে বরাদ্দ আছে। আমরা নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। তবে জনসচেতনতা খুব জরুরি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দ্রুতই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের প্রধান করে টাস্কফোর্স গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাজেট ঘোষণায় জানানো হয়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আয় হিসেবে রাজস্ব খাত থেকে ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৩০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, অন্যান্য খাতে ১৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, সরকারি অনুদান (উন্নয়ন সহায়তা) ৫৪ কোটি ১২ লাখ। এছাড়া সাহায্য মঞ্জুরি ৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা পাশাপাশি সরকারি ও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাজেটে রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা, অন্যান্য ব্যয় ১৪ কোটি ৫০ লাখ, উন্নয়ন ব্যয় (নিজস্ব উৎস) ১ হাজার ৫১৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা, উন্নয়ন ব্যয় (সরকারি উন্নয়ন সহায়তা) ৫৪ কোটি ১২ লাখ টাকা, উন্নয়ন ব্যয় (সরকারি ও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প) ২ হাজার ৩৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া সমাপনী স্থিতি ধরা হয়েছে ৪৪১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ.কে.এম শফিকুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. বরকত হায়াত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।