ঢাকার ধোলাইখাল, উত্তরা ও মাতুয়াইলে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বেলা একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মাতুয়াইলে সংঘর্ষ চলছিল। পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আহত ব্যক্তির মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রয়েছেন।
সরকারের ‘পদত্যাগের এক দফা’ দাবিতে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে আজ বেলা ১১টা থেকে ৫ ঘণ্টার ‘অবস্থান’ কর্মসূচি দেয় বিএনপি। গাবতলী, উত্তরা, নয়াবাজার ও শনির আখড়া এলাকায় এই অবস্থান কর্মসূচির আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ সেখানে অবস্থান নেন। বেলা ১১টার পর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন।
পুরান ঢাকার ধোলাইখালে বেলা ১১টার পরে কয়েক শ বিএনপির নেতাকর্মী লাঠিতে জাতীয় পতাকা বেঁধে সড়কের এক পাশে অবস্থান নেন। তারা সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। বিএনপির এই কর্মসূচি পালনের কথা ছিল পুরান ঢাকার নয়াবাজারে। তবে সেখানে আজ সকাল থেকে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যও সেখানে মোতায়েন করা হয়।
বিএনপির নেতাকর্মীরা নয়াবাজার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ধোলাইখাল এলাকায় অবস্থান নেন। সেখানেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সরেজমিনে দেখা যায়, ধোলাইখালে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রথমে পুলিশের ধাওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীরা পিছিয়ে যান। পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা সংঘটিত হয়ে পুলিশকে ধাওয়া দেন।
ঘটনাস্থলে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালামসহ অন্য নেতারা। তারা নেতাকর্মীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তা সম্ভব হয়নি।
পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আহত হন। পুলিশ তাকে একটি দোকানের ভেতরে নিয়ে যায়। পরে তাকে একটি পুলিশ ভ্যানে করে সরিয়ে নেওয়া হয়। আব্দুস সালামকেও পুলিশ এখান থেকে আটক করে নিয়ে যায়। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পুলিশ বলেছে, চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ধোলাইখালে বিএনপির নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। এর পৌনে এক ঘণ্টা পর লাঠিসোঁটা হাতে সেখানে এসে মিছিল করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা হাতে যখন মিছিল করেন, তখনো ধোলাইখালে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা সোয়া একটার দিকে ধোলাইখাল মোড়ে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে নিয়ে মিছিল বের করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে তারা বিএনপির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। পরে চলে যান।
দুপুর দেড়টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়, ধোলাইখাল মোড় ও এর পাশের রায়সাহেব বাজার মোড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য ছিলেন। রায়ট কার, এপিপিসহ পুলিশের সাঁজোয়া যান বিভিন্ন সড়কে চলাচল করছে। সংঘর্ষের সময় এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সেগুলো আর খোলেনি। এলাকায় রাস্তায় ইটের খোয়া পড়ে আছে। স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
ঢাকার উত্তরায়ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা ১১টার কিছু পরে বিএনপির নেতাকর্মী উত্তরার বিএনএস সেন্টারের কাছে জড়ো হন। তাদের পুলিশ সরে যাওয়ার জন্য বলে। কিছুক্ষণ পরে বিএনপির আরও নেতাকর্মী সেখানে যান। একপর্যায়ে তারা রাস্তার মাঝখানে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। তখন তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ হয়। তারপর পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে এবং ধাওয়া দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা পিছু হটে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নেন। সেখান থেকে তারা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেন। বেলা ১টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত ছিল। পুলিশ বিএনএস সেন্টারের সামনে অবস্থান করছিল। পুলিশ দাবি করেছে, যে তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ হয়েছে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার কারণে।