এল ক্লাসিকো মানেই উত্তাপ ও রোমাঞ্চ। সেটি প্রাক্–মৌসুম প্রস্তুতির ম্যাচ হলেও উত্তাপে থাকে না কোনো কমতি। যেকোনো পর্যায়ে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মুখোমুখি লড়াই নিয়ে সমর্থকদের আগ্রহও থাকে তুঙ্গে। গতকাল রাতেও রিয়াল-বার্সার সমর্থকদের চোখ ছিল টেক্সাসের এটি অ্যান্ড টি স্টেডিয়ামে। যে লড়াইয়ে শেষ হাসি হেসেছে বার্সেলোনা সমর্থকেরাই। দারুণ খেলে রিয়ালকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে কাতালানরা। এ জয় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাঠে রিয়ালের বিপক্ষে নিজেদের দাপটও ধরে রাখল বার্সা। এই পর্যন্ত ৩ ম্যাচ খেলে ৩টিতেই জিতেছে তারা।
এ জয়ে মৌসুম শুরুর আগে রিয়ালকে সতর্কবার্তাও যেন দিয়ে রাখল জাভি হার্নান্দেজের দল। গত মৌসুমে রিয়ালকে পেছনে ফেলেই লা লিগা শিরোপা জিতেছিল বার্সা। এবার নিজেদের লক্ষ্যটাকে আরও বড় করেছে তারা। ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চেও নিজেদের দাপট ফেরাতে চায় ক্লাবটি। আর বার্সাকে পেছনে ফেলতে রিয়ালকে যে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হয়ে আসতে হবে, সেই ইঙ্গিতও দিয়ে গেল ম্যাচটি।
এল ক্লাসিকোর এই লড়াইয়ে দুই দলই মাঠে নেমেছিল শক্তিশালী একাদশ নিয়ে। ৪-৩-৩ ফরমেশনে রিয়াল আক্রমণভাগে খেলিয়েছে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রদ্রিগো এবং জুড বেলিংহামের মতো তারকাদের। অন্যদিকে বার্সা রবার্ট লেভানডফস্কি, উসমান দেম্বেলে এবং পেদ্রিদের সঙ্গে রেখেছিল ম্যান সিটি থেকে আসা ইলকায় গুন্দোয়ানকেও। ম্যাচে বল দখল এবং আক্রমণে কিন্তু বার্সা নয় এগিয়ে ছিল রিয়ালই। ৫৩ শতাংশ বলের দখল রেখে রিয়াল শট নেয় ২৯টি। যদিও মাত্র ৫টি শটই লক্ষ্যে রাখতে পারে তারা। অন্যদিকে বার্সা ১২টি শট নিয়ে ৭টিকেই লক্ষ্যে রাখে। এদিন বার্সা বাজিমাত করেছে মূলত ফিনিশিংয়ে। অন্যদিকে রিয়াল বেশ কিছু সুযোগ নষ্ট করে ম্যাচ হাতছাড়া করেছে।
ম্যাচের শুরু থেকেই অবশ্য আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয় দুই দল। ১৫ মিনিটে বার্সাকে লিড এনে দেন দেম্বেলে। পেদ্রির কাছ থেকে ডি-বক্সের ভেতর বল পেয়ে কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ফরাসি তারকা। এরপর ম্যাচে সমতা ফেরানোর জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যায় রিয়াল। ২০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে সুবর্ণ এক সুযোগও এসেছিল ভিনিসিয়ুসের সামনে। কিন্তু সেই সুযোগ নষ্ট করেন ভিনি। প্রথমার্ধের বাকি সময়ও ম্যাচে ফিরতে মরিয়া ছিল রিয়াল। বার্সাও চেয়েছিল ব্যবধান বাড়াতে কিন্তু কখনো নিজেদের ভুলে আবার কখনো গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় জালের দেখা পায়নি কোনো দলই।
বিরতির পরও আক্রমণ প্রতি-আক্রমণে জমে ওঠে ম্যাচ। গোলের জন্য দুই দলই তখন মরিয়া। সুযোগও তৈরি হচ্ছিল বেশ, কিন্তু ফিনিশিংয়ের কাজটাই ঠিকঠাক করতে পারছিল না কোনো দল। অবশ্য এই ম্যাচে পোস্টে লেগেও বেশ কয়েকটি সুযোগ নষ্ট হয়েছে। অবশেষে ৮৫ মিনিটে নিজেদের দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় বার্সা। সের্হিও রবার্তোর কাছ থেকে বল পেয়ে বুলেট গতির শটে লক্ষ্যভেদ করে বার্সাকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন লোপেজ মার্তিন।
এরপর যোগ করা সময়ে আবার বার্সার দাপট। এবার লোপেজের কাছ থেকে বল পান ফেরান তোরেস। আগুয়ান গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়ার মাথার ওপর দিয়ে সেই বল উঠিয়ে দিয়ে আবার এগিয়ে গিয়ে দারুণ ফিনিশিংয়ে লক্ষ্যভেদ করে এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। এই গোলের পর শেষ পর্যন্ত বড় হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় রিয়ালকে।
প্রাক্–মৌসুম সফরে যুক্তরাষ্ট্রে আরও একটি করে ম্যাচ খেলবে রিয়াল-বার্সা। ৩ আগস্ট রিয়ালের প্রতিপক্ষ ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাস। আর ২ আগস্ট বার্সা যুক্তরাষ্ট্র সফরে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে এসি মিলানের বিপক্ষে।