বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য এবং বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্বের প্রশ্নেই একদিন আমরা গঠন করেছিলাম বাংলাদেশ। স্বাধীন ও সার্বভৌম এই দেশটি গড়ে তুলতে আন্দোলন, সংগ্রাম আর লড়াইয়ে যারা অবদান রেখেছেন তাদের পুরোধা হচ্ছেন এই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর ছিল অমিততেজা চার সহকর্মী-সহযোদ্ধা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামান। ৩০ লাখ শহিদ তিন লাখ মা-বোন আর কন্যাদের সম্ভ্রমের লুণ্ঠনে এবং অকতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের বিক্রমশীল লড়াইয়ে অর্জিত আমাদের এই ‘সকল দেশের রানী’ বাংলাদেশ।
ইতিহাসে বাঙালিদের এই আধুনিক রাষ্ট্রে প্রত্যাবর্তন করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি গড়ে তোলার পত্রপরিক্রমণের যাত্রা পথে মাত্র সাড়ে তিন বছরেই প্রতিষ্ঠাতা পিতাকে সপরিবারে (দুই কন্যা ব্যতীত) হত্যা করে ক্ষমতার তখতে পরিবর্তন এনে কবরস্থ করা পাকিস্তানের কায়েমি স্বার্থের রাজনীতিকে পুনর্বাসনের অপপ্রয়াস পায় মোশতাক-জিয়ার ঘৃণ্য চক্র। অবশ্য ততদিনে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ভিত রচনা করে ফেলেছেন বঙ্গবন্ধু। একটি কেন্দ্রীয় রাষ্ট্র ও সরকার কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা হয়ে গেছে বিধ্বস্ত অবকাঠামো পুননির্মাণ করা হয়েছে এবং শূন্য থেকে টেনে এনে অর্থনীতির খুঁটিকে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকার। ১৫ আগস্টের কালরাত্রি অভূতপূর্ব সাফল্যের এই অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে উদ্যত হয়।
এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে দেশের স্তব্ধ ও দিশেহারা মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে সোচ্চার হতে না পারলেও হতাশার ঘোর কাটিয়ে উঠে শিগগিরই লড়াইয়ের পথে, সংগ্রামের পথে অগ্রসর হয়। পাকিস্তানি ভাবধারা এবং মুৎসুদ্দি পুঁজির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ২০ অক্টোবর এবং ৪ নভেম্বর ১৯৭৫-এ যে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল ২১ বছর পেরিয়ে ১৯৯৬-এর ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে একটি বৃহৎ বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বেড়াজাল ছিন্ন করতে না পারায় ২০০১ সালের নির্বাচনে আবার পথ হারায় বাংলাদেশ। এরপর শুরু হয় নতুন সংগ্রাম। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা পুনরায় জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়ে গণতন্ত্রের স্থায়িত্ব এবং উন্নয়নের পথ চলতে সরকার গঠন করেন। এরপর থেকে অদ্যাবধি তাঁর নেতৃত্বে দেশ অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে অব্যাহত গতিতে ছয় পদবিক্ষেপে উন্নয়নের পথ ধরে এগিয়ে চলছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের এই ৪৮ বছরে আজ হিসেবের খাতা খুলে দেখছি আমরা। মোশতাক-জিয়া-এরশাদ-খালেদা আর ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন-ইয়াজ উদ্দিনের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও দেশ এগিয়ে চলছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ আজ আমাদের দেশ। স্বল্পোন্নত থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি আমরা। জাতিসংঘের এমডিজি বাস্তবায়ন করে এসডিজি বাস্তবায়নের পথে- ফ্লাইওভার এক্সপ্রেস ওয়ে, স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, উদীয়মান আকাশপথ, শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী, শক্তিশালী অর্থনীতি সবকিছুই এখন বাংলাদেশের করায়ত্ব। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল এক দেশ বাংলাদেশ। যারা মনে করেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশকে পেছন দিকে নিয়ে যাবে, তারা এখনও ভুল পথেই হাঁটছে।
কাজেই আসুন জাতির পিতার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শোককে আমরা শক্তিতে পরিণত করি। ২০৪১ সালে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্য মুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করি। তাহলেই জাতির শোক দিবস পালনে আমাদের প্রয়াস যথার্থতা পাবে। ১৫ আগস্টের শহিদগণের প্রতি রইল অফুরন্ত ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা।