মালয়েশিয়ায় ছুরিকাঘাতে বাংলাদেশি খুন

মত ও পথ ডেস্ক

নিহত সুমন মিয়া। সংগৃহীত ছবি

প্লাইউড নিয়ে মারামারি করতে গিয়ে মালয়েশিয়ায় ইন্দোনেশিয়ান শ্রমিকের ছুরিকাঘাতে বাংলাদেশি নিহত হওয়া খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ৫৩ বছর বয়সী ইন্দোনেশিয়ান নাগরিককে গ্রেফতার করে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছেন দেশটির আদালত।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২৯ জুলাই সুঙ্গাই পেটানির শ্রী আস্তানায় স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে প্লাইউড নিয়ে তর্কের সময় ক্ষুব্ধ হয়ে ৫৩ বছর বয়সী ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক বাংলাদেশি শ্রমিকের পেটে ছুরিকাঘাত করে। রক্তকরণে ঘটনাস্থলেই বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। উভয়েই একটি হাউজিং সাইটে নির্মাণ কোম্পানিতে কাজ করছিলেন।

নিহত বাংলাদেশির নাম মো. সুমন মিয়া (৩১)। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানার আদমপুর ইউনিয়নের টুকারকান্দি গ্রামের মোল্লা বাড়ির জিয়াউর রহমানের ছেলে মো. সুমন মিয়া (৩১) বলে জানা গেছে।

কুয়ালা মুদা জেলা পুলিশ প্রধান, সহকারী কমিশনার জাইদি চে হাসান বলেন, ছুরির আঘাতে পেটে গুরুতর আঘাতের কারণে বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার বলেন, ঘটনাটি তাদের মধ্যে প্লাইউড নিয়ে বিরোধের কারণে হয়েছিল। তদন্তে জানা গেছে, সুমন প্রথমে ইন্দোনেশিয়ান নাগরিককে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে লোকটি রেগে যায় এবং তাকে ছুরিকাঘাত করে প্রতিশোধ নেয় যোগ করেন সহকারী কমিশনার জাইদি চে হাসান।

জাইদি বলেছেন, ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ওই দিন রাত ৮টায় বেডং এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ এখনও এই ঘটনায় যে অস্ত্র ব্যবহার করেছিল তা খুঁজছে।

সুমনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সুলতান আব্দুল হালিম হাসপাতালে (এইচএসএএইচ) পাঠানো হয়েছে এবং তদন্ত সম্পূর্ণ করতে ঘটনাস্থলে প্রত্যক্ষদর্শীদের সন্ধান করছে পুলিশ।

৩১ জুলাই, ম্যাজিস্ট্রেট খায়রাতুল আনিমা জেলানীর আদেশের পর দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় আরও অধিক তদন্তে ইন্দোনেশিয়ান নাগরিককে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

দেশে থাকা সুমনের মা সাফিয়ার (৪০) সাথে ফোনে কথা বলে জানা গেছে, চার-ভাই বোনের মধ্যে সুমন দ্বিতীয়। পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে ধার-দেনা করে ২০১৪ সালে সুমন নদী পথে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুমনের মা জানান, মালয়েশিয়া যাওয়ারপর সুমনের ১০ বছর কেটে যায় অবৈধভাবেই। এই ১০ বছরে বাবা মাকে একটি টাকাও দিতে পারেনি সুমন। সুদে টাকা এনে তাকে মালয়েশিয়া পাঠানো হয়েছিল। এখনও সুদের টাকা পরিশোধ করতে পারিনি। লোকজন টাকার জন্য তাড়া দেয়। সুমনের বাবা জিয়া মিয়া ঝালমুড়ি বিক্রি, আর মা বাসায় বাসায় জিয়ের কাজে চলে সংসার।

এদিকে ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন সুমনের মা। সুমনকে এক নজর দেখেতে মা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে কবে সুমনের মরদেহ দেশে পাঠানো হবে এ বিষয়ে জানতে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

সুমনের বোন জামাই নূর নবী জানিয়েছেন, সুমনের মরদেহ দেশে আনতে বুধবার (২ আগস্ট) যাবতীয় কাগজপত্র উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কছে দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে সুমনের কাগজপত্র মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিনে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন নূর নবী।

শেয়ার করুন