‘ডেঙ্গু নিয়ে সরকারের গা-ছাড়া ভাব, কাজে সমন্বয় নেই’

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়তে শুরু করে ২০০০ সালে। এরপর ২৩ বছর পার হলেও এটি নিয়ন্ত্রণে দেশে কোনো অভিজ্ঞতা অর্জন করা হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংস্থাগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। সরকারি পর্যায়ে কোনো গবেষণা হয়নি। চিকিৎসাব্যবস্থাও শহরের সব মেডিকেল কলেজকেন্দ্রিক। দেশজুড়ে কোনো কার্যক্রম নেই।

আজ রোববার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আলোচকেরা এসব কথা বলেন। ‘পরিবেশ ও সামাজিক অভিঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে ডেঙ্গুর প্রসার’ ছিল এ সভার আলোচ্য বিষয়।

সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশের ওপর অত্যাচারের প্রভাবে ডেঙ্গুর এই বিস্তার। সরকারের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ে গা–ছাড়া ভাব আছে, ভয়াবহতা বুঝতে পারছে না। সরকারের মধ্যে সমন্বিত কোনো কর্মপরিকল্পনা নেই। এমনকি দুই সিটির মধ্যে সমন্বয় নেই। শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও সঠিকভাবে হয় না।

ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকায় যেভাবে সড়ক হয়েছে, তাতে সড়ক উঁচু হয়েছে এবং বাড়িগুলো নিচু থেকে যাচ্ছে। ফলে সেখানে পানি জমছে। বিশেষ করে ডেঙ্গুর হটস্পট যে জায়গাগুলো, সেখানে রাস্তা অনেক উঁচু। তিনি সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরকে কাজে লাগানেরা কথা বলেন।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন মহামারি পর্যায়ে চলে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে কখনো রাজনৈতিক কারণ ছাড়া জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় না।

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিয়ে মুশতাক হোসেন বলেন, ঢাকায় কোনো জনস্বাস্থ্য কাঠামো নেই। ফলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই সব হচ্ছে। এ জন্য হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে গিয়ে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রয়োজনে ফ্রি করতে হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোগী শনাক্ত করতে হবে। রোগী পেলে সেখানে মশকনিধন কার্যক্রম চালাতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি কাজে হাত দিতে হবে।

সভায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেনিন চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গুবিষয়ক আলোচনা শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক। সারাদেশকে ডেঙ্গুমুক্ত করতে সমন্বিত কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশার কামড় থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছে না। সরকার যে তথ্য দিচ্ছে, তা ১২ ভাগের ১ ভাগ। সরকারের হিসাব থেকে রোগীর সংখ্যা বহুগুণ বেশি। পাশের দেশ ভারতের কলকাতা যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার একটি পদক্ষেপও আমরা নিইনি।

শেয়ার করুন