সর্বজন শ্রদ্ধায় সিক্ত শহীদ জায়া পান্না কায়সার

নিজস্ব প্রতিবেদক

লেখক-গবেষক, বুদ্ধিজীবী, সাবেক সংসদ সদস্য শহীদজায়া অধ্যাপক পান্না কায়সার। ফাইল ছবি

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বজনের শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন বরেণ্য লেখক-গবেষক, বুদ্ধিজীবী, শিশু-কিশোর আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সাবেক সংসদ সদস্য শহীদজায়া অধ্যাপক পান্না কায়সার। আজ রোববার বেলা ১১টায় তাঁর মরদেহ শহীদ মিনারে আনা হয়। এ সময় রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়িক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদনের এ আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

শ্রদ্ধা জানানো শেষে মরদেহ বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে নেওয়া হয়। এরপর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তাঁর ছেলে অমিতাভ কায়সার মায়ের পক্ষে সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। নামাজ শেষে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নেওয়া হয়।

প্রথমে শ্রদ্ধা জানায় পান্না কায়সারের হাতে গড়া শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘর। এরপর সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক কমিটি, ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ঢাকা থিয়েটার, সম্প্রীতি বাংলাদেশ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সংস্কৃতি মঞ্চ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণতন্ত্রী পার্টি, জাতিসংঘ সমিতি, রবীন্দ্র সংগীত সম্মেলন পরিষদ, গণ আজাদী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, ছায়ানট, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, শিশু একাডেমি, প্রজন্ম একাত্তরসহ আরও বহু সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ গড়ে তোলা আমাদের একটি বড় দায়িত্ব। পান্না কায়সার সেই দায়িত্ব সারাজীবন সুন্দরভাবে পালন করে গেছেন।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পান্না কায়সারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। ১৯৭১ সালে তাঁর স্বামী বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হন। এরপর তিনি সারাজীবন কষ্ট করে সন্তানদের মানুষ করেছেন। পান্না কায়সার একাধারে লেখক ও সংগঠক ছিলেন। তিনি খেলাঘরের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি আজীবন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন। আওয়ামী লীগের মনোনীত সংসদ সদস্য হিসেবে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।

শিক্ষাবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, তাঁর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাঁর মতো একজন অমায়িক ও আদর্শবান মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তিনি আমাদের দেশকে, দেশের মানুষকে গড়তে সব সময় কাজ করে গেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে পটভূমি তৈরি করতে পান্না কায়সার মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। নতুন প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয় এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ যাতে নতুন প্রজন্মের মাঝে সঞ্চারিত হয়, সেজন্য তিনি খেলাঘর প্রতিষ্ঠানটি আমৃত্যু পরিচালনা করেছেন।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ১৯৭২ সালে প্রথম যখন রাজাকারদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছি, সেই আন্দোলনে তিনি সামনের সারিতে ছিলেন। তিনি পুরো জীবনেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দেশ তৈরি করতে কাজ করে গেছেন।

আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, পান্না কায়সার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এক পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার, অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্য তিনি কাজ করে গেছেন। তাঁর চলে যাওয়া আমাদের দেশের জন্য, রাজনীতির জন্য, শুদ্ধ সংস্কৃতির জন্য একটি বড় অপূর্ণতা।

শেয়ার করুন