বান্দরবানে পাহাড়ধস ও দেয়াল চাপায় তিনজনের মৃত্যু

বান্দরবান প্রতিনিধি

প্রবল বৃষ্টিতে আজ মঙ্গলবার সকালের দিকে বান্দরবানের আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড়ধসে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া লামা উপজেলার কুমারী এলাকায় মাটির ঘর ধসে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তবে নিহত ব্যক্তিদের নাম–পরিচয় জানা যায়নি। বিভিন্ন সড়কের ওপর পাহাড় ধসে পড়ায় জেলার সব কটি উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বান্দরবান-রাঙামাটি ও বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন এলাকা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুই জেলার সঙ্গেও বান্দরবানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জেলার আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড়ধসে দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় নিহত ব্যক্তিদের নাম–পরিচয় পাওয়া যায়নি। এদিকে লামা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল জানান, উপজেলার কুমারী এলাকায় মাটির ঘর চাপা পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তবে নিহত নারীর নাম জানাতে পারেননি তিনিও।

universel cardiac hospital

এদিকে ছয়দিন টানা বৃষ্টির পর আজ বিকেলে বৃষ্টি কমলেও এখনো জেলা শহরের ৬০ শতাংশ ও লামা উপজেলা সদরের ৮০ শতাংশ পানিতে ডুবে রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ উপকেন্দ্র পানিতে ডুবে থাকায় দুইদিন ধরে জেলা শহর বিদ্যুৎবিহীন। ফলে মুঠোফোন নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়েছে। এখনো অনেক মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে সেনাবাহিনীকে কাজে নামানো হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন আজ বেলা একটায় জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বন্যা নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বরত তাসলিমা সিদ্দিকা জানিয়েছেন, জেলায় আজ দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। জেলার সাতটি উপজেলায় ২০৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে ৯ হাজার মানুষকে আশ্রয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে থাকা মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ধসে প্রায় ৪৫০টি পরিবারের বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বন্যার পানিতে কতটি পরিবারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।

জেলা শহরের উজানীপাড়া, চিত্রসেন বৈদ্যপাড়া, মেম্বারপাড়া, আর্মিপাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, ফায়ার সার্ভিস এলাকা, হাফেজঘোনা, ইসলামপুর, কাসেমপাড়া, বাসস্টেশন এলাকা, ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের আশপাশের এলাকা, বালাঘাটার আমবাগানসহ বিভিন্ন এলাকা তিন থেকে পাঁচ ফুট পানির নিচে ডুবে রয়েছে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের নিচতলা, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পানিতে তলিয়ে গেছে। আদালত পুলিশের আবাসিক ভবন ডুবে যাওয়ায় পুলিশ সদস্যরা সবাই দ্বিতীয় তলায় আদালতের বারান্দায় আশ্রয় নিয়ে দেখা গেছে।

বন্যা দুর্গত হাজারো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ও হাসপাতালেও যেতে পারছে না। বেলা ১১টায় হাসপাতাল সড়কে নৌকায় করে রোগীদের নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এ সময় একটি নৌকা উল্টেও যায়। তবে বুকসমান পানি থাকায় কেউ ডুবে যাননি। ছোট ওই নৌকায় অন্তত ১০ জন যাত্রী উঠেছিলেন বলে সেটি ভারসাম্য রাখতে পারেনি।

লামা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, উপজেলা সদরে ৮০ শতাংশ পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। হাসপাতাল, খাদ্যগুদাম, থানা ও উপজেলা পরিষদের নিচতলা দুই দিন ধরে ডুবে রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় মুঠোফোন নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়েছে। এতে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সকালে ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের কুমারী এলাকায় অতিবর্ষণে মাটির রান্নাঘর ধসে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

বান্দরবান জেলা শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ উপকেন্দ্র ও উপকেন্দ্রের কার্যালয় দুই দিন ধরে ডুবে রয়েছে। এ সরবরাহ কেন্দ্র থেকে জেলা শহর, বান্দরবান সদর উপজেলা, রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় সন্ধ্যার পর জেলা শহর ও চারটি উপজেলা অন্ধকারে ডুবে যায়। বিদ্যুৎ না থাকায় জেলা শহরের পানি সরবরাহব্যবস্থা, মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়েছে। পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়া মানুষ পানীয় জলসহ দৈনন্দিন ব্যবহারের পানির মারাত্মক সংকটে পড়েছে। বাজার বোতলজাত পানি, মোমবাতি, গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে না বলে অনেকে জানিয়েছেন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী প্রদীপ্ত চক্রবর্তী বলেন, সরবরাহ উপকেন্দ্র ও কার্যালয় ডুবে যাওয়ায় বিদ্যুৎ চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

দুপুরে জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিং করেন। এতে তিনি বলেন, পানিবন্দী মানুষের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসাসহ দুর্যোগ মোকাবিলার কাজে সেনাবাহিনী সহযোগিতা করছে। লামা উপজেলা সদর ও জেলা শহর সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকার অধিকাংশ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা সম্ভব হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। যোগাযোগের জন্য সেনাবাহিনী থেকে কয়েকটি ওয়্যারলেস সেট দেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন