নগদ টাকার ব্যবহার কমানো এবং লেনদেন সহজ করতে কনসোর্টিয়াম বা জোটবদ্ধ হয়ে ‘ডিজি টেন ব্যাংক পিএলসি’ নামে একটি ডিজিটাল ব্যাংক করতে চায় ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এরই মধ্যে উদ্যোক্তা হিসেবে এ ব্যাংকে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি ব্যাংক।
বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে এ বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে সিটি ব্যাংক। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদন দিলে এ বিনিয়োগে যেতে পারবে সিটি ব্যাংক।
এ বিষয়ে সিটি ব্যাংক জানিয়েছে, ৯টি ব্যাংকের কনসোর্টিয়াম ‘ডিজি টেন ব্যাংক পিএলসি’ নামের ডিজিটাল ব্যাংকের আবেদন করবে। এ কনসোর্টিয়ামে যোগ দিতে সিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন দিয়েছে।
সিটি ব্যাংক ‘ডিজি টেন ব্যাংক পিএলসি’র উদ্যোক্তা হিসেবে ১৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবে। যা ডিজিটাল ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধনের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ।
জানা গেছে, ডিজি টেন ব্যাংক পিএলসি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে করা কনসোর্টিয়ামে অন্য ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক। তবে এ ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
গত ১৪ জুন ‘ডিজিটাল ব্যাংক নীতিমালা’ চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ১০ শর্ত অনুসরণ করতে হবে। আর ঋণ বিতরণের জন্য পাঁচটি শর্ত অনুসরণ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র মো. আবুল বশর বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদনের জন্য পাঁচ লাখ টাকা অফেরতযোগ্য আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর প্রথম শর্ত হিসেবে থাকছে ১২৫ কোটি টাকার ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ।
ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে প্রত্যেক স্পন্সরের ন্যূনতম শেয়ারের পরিমাণ হতে হবে ৫০ লাখ টাকা। সরাসরি কাউন্টারে বা সশরীরে কোনো গ্রাহককে সেবা দেওয়া যাবে না। লাইসেন্স পাওয়ার পরের পাঁচ বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে।
অন্য শর্তসমূহের মধ্যে রয়েছে- উদ্যোক্তদের শেয়ার ব্যাংক ব্যবসা শুরুর পাঁচ বছরের মধ্যে হস্তান্তর না করা, পরিচালকের সংখ্যা অনধিক ২০ জন, একই পরিবার থেকে চারজনের বেশি পরিচালক না হওয়া, শক্তিশালী আইসিটি অবকাঠামো পৃথক এলাকায় ডিজাস্টার রিকভারি সাইট থাকা, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপি কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি, ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার হতে পারবে না।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং ও ব্যাংকিং রেগুলেশন ইত্যাদি বিষয়ে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্নসহ ব্যাংকিং পেশায় ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
ঋণের ক্ষেত্রে শর্তঋণ বিতরণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে গ্রাহক ইন্টারন্যাল ক্রেডিট রিস্ক রেটিং (আইসিআরআর) নীতিমালা যাচাই, ডিজিটাল ব্যাংকের মাধ্যমে শুধু এসএমই ঋণ বিতরণ করা। এছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্য ঋণ, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পে বিনিয়োগ না করা, ঋণ প্রদানে অস্থাবর সম্পত্তি সহায়ক জামানত রাখা ও দৈনন্দিন লেনদেনের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সক্রিয় রাখা।