হতাশার আরও একটি সপ্তাহ পার করল দেশের পুঁজিবাজার। আলোচিত এই সপ্তাহে দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর। ফলে বিদায়ী সপ্তাহে কমেছে লেনদেন ও সূচক। আর তাতে বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন অর্থাৎ পুঁজি কমেছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ৩৫টি কোম্পানির শেয়ারে দাম বেড়েছে, বিপরীতে কমেছে ১৪৪টি কোম্পানির শেয়ারের দর। আর তাতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বা বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। একই অবস্থা অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। বাজারটিতেও পুঁজি কমেছে ৫ হাজার ৭৯৯ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তবে তার আগের সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বেড়েছিল সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের সপ্তাহের মতই গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীরা বাজার পর্যবেক্ষণ করেছেন, যারা বিনিয়োগ করেছেন তারা সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করেছেন।
এ দিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাজারে সাপোর্ট প্রদান ও তারল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই পর্যবেক্ষণে থাকা বিনিয়োগকারীরা এখন বাজারে অংশগ্রহণ করতে পারেন। ফলে আশা করা যায়, আগামী সপ্তাহ জুড়ে বাজারে সূচকের কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণ কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডিএসইর তথ্য মতে, গত ৬ আগস্ট সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে লেনদেনের শুরুতে ডিএসইর মূলধন ছিল ৭ লাখ ৮১ হাজার ৩৭০ কোটি ৫৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা। আর শেষ দিন বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) লেনদেন শেষে মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৯৯ কোটি ৪৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে পুঁজি কমেছে ৫ হাজার ৮৭১ কোটি ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৪৬ টাকা। যা শতাংশের হিসেবে কমেছে দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর আগের মূলধন বেড়েছিল ১৭ হাজার ৪৭১ কোটি ৭০ লাখ ৯১ হাজার ১৮৮ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহের তিন দিন পতন আর দুই দিন সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দুই কর্মদিবস রবি ও সোমবার দরপতন হয়েছে। এরপর মঙ্গলবার সূচকের উত্থান হয়েছে। কিন্তু তার পরদিন বুধবার আবারও দরপতন হয়। তবে বৃহস্পতিবার সূচক সামান্য বেড়েছে। আরও দরপতন হতে পারে এই ভয়ে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করছেন বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাজারে লেনদেন হয়েছে মোট ৩৮৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এর মধ্যে ৩৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, তার বিপরীতে কমেছে ১৪৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২০৬টির। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছিল ৭৬টির, কমেছিল ৯৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২১৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩২ দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৯৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস সূচক ৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৬৮ পয়েন্টে ও ডিএস-৩০ সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৯ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৪২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৭১ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৯৬৩ কোটি ৬৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ৮৯২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন কমেছে, শতাংশের হিসাবে যা ৩০ দশমিক ১১ শতাংশ।
গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার। এরপর যথাক্রমে লেনদেন হয়েছে, ফুয়াং ফুডের, সোনালী পেপার, রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা,আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, লিগেসী ফুটওয়্যার, এমারেল্ড অয়েল, দেশবন্ধু পলিমার, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং জেএমআই হসপিটাল লিমিটেডের শেয়ার।
দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক ৯০ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ৫৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ১২ লাখ ৯১ হাজার ১৭৫ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৬১ কোটি ৭২ লাখ ৩ হাজার ৭৭ টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৮টির, কমেছে ১২২টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।