বাহরাইনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম সেবা চালু হয়েছে। এ উপলক্ষে ১১ আগস্ট আনন্দমুখর পরিবেশে দূতাবাসের সহযোগিতায় এবং বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আয়োজনে, ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
রাষ্ট্রদূত ড. মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব, ফয়সল আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ মো. তৌফিকুল ইসলাম।
কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান এ. কে. এম. মহিউদ্দিন কায়েসের সঞ্চালনায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও শোকের মাস আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির শুভ সূচনা করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক, উপ-পরিচালক, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, বাহরাইনে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতাসহ দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্যে মো. ইলিয়াসুর রহমান, কাউন্সেলর (পাসপোর্ট ও ভিসা) উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে ই-পাসপোর্টের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরে বলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মুজিবর্ষের প্রথম উপহার হিসেবে বাংলাদেশি নাগরিকদের হাতে ই-পাসপোর্ট ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি তুলে দেন। যার ধারাবাহিকতায় বাহরাইনে আমরা ই-পাসপোর্ট পরিষেবা চালু করতে পেরেছি। তিনি দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এবং ফেসবুক পেজে শিগগির ই-পাসপোর্ট পরিষেবা প্রাপ্তির নিয়মাবলী উল্লেখ করা হবে বলে জানান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে লে. কর্নেল সৈয়দ মো. তৌফিকুল ইসলাম ই-পাসপোর্ট সংক্রান্ত কারিগরি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ই-পাসপোর্ট হলো একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট যাতে একটি এমবেডেড ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ রয়েছে। ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপের মধ্যে রয়েছে বায়োমেট্রিক তথ্য যা পাসপোর্টধারীর পরিচয় প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা হয়। এতে সর্বাধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ই-পাসপোর্ট সম্পর্কিত সম্যক ধারণা দেওয়ার জন্য তিনি একটি ভিডিও ক্লিপ স্ক্রিনে প্রদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ফয়সল আহমেদ শুরুতে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনস্থ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে ৭২টি পাসপোর্ট অফিস এবং বিদেশে এখন পর্যন্ত ৩০টি স্থান হতে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ই-পাসপোর্ট প্রজেক্টের মাধ্যমে এরই মধ্যে ঢাকাস্থ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বেনাপোল স্থলবন্দরে ই-গেইট স্থাপন করা হয়েছে। ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের সার্বিক সাফল্য ও উপস্থিত সকলের মঙ্গল কামনা করে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, দূতাবাসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হওয়ার মাধ্যমে বাহরাইন প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে। তিনি সবার উদ্দেশ্যে ই-পাসপোর্টের নানাবিধ সূবিধাসমূহ তুলে ধরেন। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করার দিক থেকে বাংলাদেশ দূতাবাস, বাহরাইন ৩০তম বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন হিসেবে এর শুভযাত্রা শুরু করলো। আরও ৫০টি বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনে ই-পাসপোর্ট সেবা খুব তাড়াতাড়ি চালু করা হবে।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, তার নেতৃত্বে দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। রাষ্ট্রদূত বক্তব্যের শেষে প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের দলমতের বিভেদ ভুলে একযোগে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদাশীল ‘সোনার বাংলাদেশ’ তথা প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আওতায় ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পক্ষ হতে রাষ্ট্রদূত ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলামকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ই-পাসপোর্ট সেবা প্রত্যাশী ৪ জনকে এনরোলমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের হাতে অনুষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধান অতিথি কর্তৃক ডেলিভারি স্লিপ হস্থান্তর করা হয়।