মানুষ বঙ্গবন্ধু, সার্বজনীন বঙ্গবন্ধু

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন নিয়ে আলোচনার শুরুতে আমাদের সকলকেই এটা জানা দরকার- বাংলাদেশটা যেমন কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়, তেমনি বঙ্গবন্ধুও কারও পারিবারিক সম্পত্তিও নয়, এমনকি কারও দলীয় সম্পত্তিও নয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপিতা। তিনি আমাদের জাতির পিতা। কাজেই বঙ্গবন্ধু সার্বজনীন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর যে একটি সার্বজনীন গ্রহণ যোগ্যতা আছে এই কথাটি আমরা কখনো আমাদের কার্যকলাপের দ্বারা মানতে চাই না। যত পারি আমরা, তাকে পৈতৃক সম্পত্তির মতো ব্যবহার করি। যেমনিভাবে স্বাধীনতা অনেকের জন্য একটা সুন্দর সুযোগ এনে দিয়েছে লুটপাট করে নিজেদের সম্পদ গড়ার। তেমনিভাবে অনেকে বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে, বঙ্গবন্ধুকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের পাল্লা ভারী করার জন্য সুযোগ এনে দিয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু শুধু রাজনীতির বিষয় নয়, বঙ্গবন্ধু সামগ্রিক অর্থেই বাংলাদেশ। এখানে রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল অনেক কিছু আছে, সব মিলিয়েই বঙ্গবন্ধু।

আমি বঙ্গবন্ধুর দর্শনকে একভাবে দেখি; সেটা হচ্ছে- বঙ্গবন্ধু একজন মানুষ ছিলেন, আর এজন্যই তিনি একটি মানবিক দেশ গঠন করতে চেয়েছিলেন। তাঁর জীবন চরিতও মানবিক ছিল। তাঁর তিনটি গ্রন্থে (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারে রোজনামচা ও আমার দেখা নয়াচীন) এই চিত্রটিই পাওয়া যায়। সেখানে অর্থনীতি ও রাজনীতির চেয়ে মানবিক দর্শনের দিকটি সবচেয়ে বেশি উচ্চকিত। তাঁর বক্তৃতাগুলোতেও দেখা যায়, তিনি মানুষকে প্রতিপাদ্য করেছেন। কারণ তাঁর রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, এমনকি তাঁর ধর্মীয় চেতনাবোধও ছিল মানুষকে ঘিরে।

universel cardiac hospital

বাংলাদেশে কিন্তু বহু রাজনীতিবিদ ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক অনেক রাজনীতিবিদকে অনেকে তাঁর চেয়ে উঁচু রাজনীতিক মনে করেন, যেমন শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, এমনকি তাঁর গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকেও অনেকে বড় রাজনীতিবিদ মনে করেন, তাঁর আরও মেন্টর মাওলানা ভাসানীকেও অনেকে বড় রাজনীতিবিদ মনে করেন। কিন্তু যখন পাকিস্তানে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তখন সক্রিয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু-ই রবীন্দ্র সঙ্গীতের পক্ষে জাস্টিস মুর্শেদদেরকে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। যখন আদমজীতে বাঙালি ও অবাঙালিদের মধ্যে দাঙ্গা সংঘটিত হয় তখনও বঙ্গবন্ধু নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৬২ সালে যখন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা সংঘটিত হয় আমিরুল ইসলাম চৌধুরী নামে যে বিখ্যাত মানুষ আত্মদান করেছিলেন মানুষের অধিকার রক্ষা করার জন্য, সেই সময় রাজনীতিবিদে পূর্ব বাংলা ভরপুর ছিল; কিন্তু সরব রাজনীতিবিদ ছিলেন একজন, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

অনেকে বাকশাল গঠন নিয়ে তির্যক মন্তব্য করে থাকেন। বঙ্গবন্ধু মন থেকে বাকশাল করতে চাননি। কিন্তু তিনি বাকশাল করেছিলেন, এটি সত্য কথা। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র পরিহার করতে চাননি, কিন্তু তাকে একদলীয় গণতন্ত্র চালু করতে হয়েছিল। কেন করতে হয়েছিল? বাকশাল গঠনের সময় তিনি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে যে ভাষণ দিয়ে ছিলেন, আপনারা সেটা দেখবেন। সেখানে কী দরদ, ভালোবাসা, কমিটমেন্ট ছিল। সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই, এই কমিটমেন্ট থেকেই তিনি দেখলেন বহুদলীয় গণতন্ত্র আমার সমাজটাকে এমন একটি জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছে, যেখানে মানুষের দাঁড়াবার মতো জায়গা নেই। তখন বিশ্বব্যাপী, তৃতীয় দুনিয়া বলে পরিচিত যে দেশগুলো ছিল, তাদের মধ্যে ওয়েলফেয়ার স্টেট গঠনের একটি ট্রেন্ড চলছিল। জুলিয়াস নায়ার যেটি তানজানিয়ায় করেছিলেন। আরবদের মধ্যে ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক গঠন করেছিলেন নাসের। এমনকি বাশার আল আসাদের পিতা হাফেজ আল আসাদও এক্সপেরিমেন্ট করেছেন কীভাবে একটি ওয়েলফেয়ার স্টেট গঠন করা যায়, যেখানে মানুষকে প্রধান্য দেওয়া হবে।

আপনারা জানেন পাকিস্তান আমলে বাইশ পরিবার ছিল। বঙ্গবন্ধু এই বাইশ পরিবারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। দুর্ভাগ্যবশত এখন আমাদের আছে বাইশ হাজার পরিবার। যারা বাংলাদেশকে শোষণ করছে। বঙ্গবন্ধু এটি চাননি। তিনি এটি চাননি বলেই- যে বহুদলীয় গণতান্ত্রিকতার সুযোগ নিয়ে এই লুটেরা ধনিক শ্রেণি মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছিলো এবং নিজেদের পুঁজি গঠনের প্রক্রিয়ায় লিপ্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতেই তিনি সেদিন বাকশাল গঠন করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছিলো, আমরা তাদের কয়জনের নাম জানি? গুটিকয়েক লোকের নাম জানি। কিন্তু আওয়ামী লীগের একটি বিরাট অংশ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল। যেজন্য আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড কখনোই মেনে নিতে পারিনি, তারা বহুদিন ধরে বলে আসছি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের খুঁজে বের করার জন্য একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। যেখানে ওঠে আসবে কারা ষড়যন্ত্রকারী। কী ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল? সেটা কিন্তু হচ্ছে না। মৌখিকভাবে বলা হচ্ছে। এমনকি জননেত্রী শেখ হাসিনার সময়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। সেখানে আপনি দেখবেন সব সামরিক কুলাঙ্গারদের ফাঁসি হয়েছে কিন্তু সিভিলিয়ানদের কারও ফাঁসি হয়নি। তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে তো খালাসই দেওয়া হয়েছিল। অথচ এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল খন্দকার মোশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, ছাত্রলীগের একসময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী সভাপতি শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, কে এম ওবায়দুর রহমান, ছাত্রলীগের বিশাল বড় নেতা নুরুল ইসলাম মঞ্জু; কে ছিল না? অনেকে ঐসময়ের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম চৌধুরীর কথাও বলে থাকেন। বিচার হয়নি তাদের। বিভিন্ন ফাঁকফোকরে তারা বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

কেননা আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী অংশ বিশ্বাস করত, পাকিস্তানটা ভেঙে দেওয়া দরকার এজন্য যে, আমাদেরকে বাইশ পরিবার হতে হবে। সেজন্য তারা পাকিস্তানকে ভাঙার ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের যে আন্দোলন-সংগ্রাম সেটার জন্য একমত হয়েছিল এবং তারা সাথে ছিল। কারণ পাকিস্তানকে ভাঙার ক্ষেত্রে যারা একমত হতে পারেনি তারা কিন্তু আওয়ামী লীগ ছেড়ে অন্য দল করেছে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বঙ্গবন্ধুর পক্ষের বড় বড় দু’জন আইনজীবী তারাও কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বিপক্ষে ছিলেন এবং পরবর্তীতে বিপক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলেন; একজন সালাম খান অন্যজন জহির উদ্দিন। এই বিষয়গুলো কিন্তু অনুধাবন করা প্রয়োজন।

অনুধাবনের বিষয় আছে যে আমরা কোথায় চলেছি। ধর্মের বিরুদ্ধে আমরা নয়, কিন্তু ধর্মানুভুতির নামে আমরা কোথায় চলেছি? যারা আমাদেরকে নিয়ে কটাক্ষ করতে চাই যে, আমরা ধর্মানুভুতিতে আঘাত করি, আসলে তারাই কী ধর্মানুভুতিতে আছেন? তারা যে ধর্মের কথা বলেন, সেই ইসলাম ধর্ম কিন্তু মানবিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে নয়। অথচ তারা এমন একটি ইসলাম আপনার সামনে নিয়ে আসবে যে ইসলাম, মানুষকে মানুষই মনে করে না। স্বাধীনতায় তারা বিশ্বাস করে না। অথচ আমরা অনেকেই তাদের সঙ্গে রাজনীতি করতে চাই। আমি যে সংগঠনটির সঙ্গে জড়িত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা; আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি সেই জেলা শাখার অন্তর্ভুক্ত অনেক নেতা আছেন- যারা স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে গাঁটছাড়া বাঁধতে চান। তাহলে কোথায় আছি আমরা?

কারা এই স্বাধীনতা বিরোধী? চিহ্নিত করা খুবই সহজ। ওমুক মাওলানা, তমুক মাওলানা এরকম নাম বলাও দরকার নেই। শুধু জিজ্ঞেস করবেন, ভাই আপনি কী জাতীয় সঙ্গীত গান? আপনি কী আপনার প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা ওঠান? আপনি কী একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করেন? আপনি কী পহেলা বৈশাখ পালন করেন? তাহলেই বেরিয়ে যাবে কে স্বাধীনতার পক্ষে আর কে স্বাধীনতার বিপক্ষে।

বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন কী? একটি মানবিক জীবন দর্শন। তিনি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। ধনী-দরিদ্র, হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান এ হিসেবে দেখতে চান নাই। আমরা সকলে যদি বঙ্গবন্ধুর এই আদর্শটাকে লালন করতে পারি, তাহলেও তো একটু কাছে যেতে পারি। বঙ্গবন্ধু যে বাইশ পরিবারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। ঐ বাইশ পরিবারের বিরুদ্ধে কী তাঁর কোনো ব্যক্তিগত আক্রোশ ছিল? না। কিন্তু বাইশ পরিবারের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করেছিলেন কেন? এজন্য যে, এই বাইশ পরিবার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে শোষণ করে দরিদ্রতর থেকে দরিদ্রতর অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে। আর এখন বাইশ হাজার পরিবার। বঙ্গবন্ধুর দর্শনের সঙ্গে এখানেই তো দ্বন্দ্ব আমাদের। এই বাইশ হাজার পরিবারকে আমরা হয় জ্ঞাতে না হয় অজ্ঞাতে সহযোগিতা করি। এজন্যই বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির সাথে আমাদের বিরোধ হয়ে যাচ্ছে। তাহলে কীভাবে আমরা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির পক্ষের লোক দাবি করব?

আইয়ুবীয় স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ করেছিলেন। আমরা যুদ্ধ করেছি বাংলাদেশের সামরিকতন্ত্রগুলোর বিরুদ্ধে। এরশাদ সাহেব হোক আর জিয়া সাহেবই হোক। কিন্তু নিশ্চয়ই নিজেরা স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠার জন্য নয়। আমরা একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য, গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের জন্য লড়াই করেছি। কেননা গণতান্ত্রিক সমাজ ছাড়া মানবিক সমাজ তথা শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে ওঠে না। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দর্শনগতভাবে আমাদের বিশাল বড় বিরোধ রয়ে গেছে। অথচ আমরা বঙ্গবন্ধুর কথা বলি।

আমি শোষনমুক্ত সমাজের স্বাক্ষী এমনটিও নয়। শোষণের হাতিয়ার হিসেবে যারা ব্যবহৃত হয়, আমি তাদেরই একজন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শোষনমুক্ত সমাজ চেয়েছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নাই। যত সমালোচনাই করুক তার, যতভাবেই তাকে আখ্যায়িত করা হোক না কেন। তাঁর শাহাদতবরণের পরে দেখা গেছে, এই ভদ্রলোক নিঃস্ব ছিলেন, কিছুই ছিল না, ব্যাংকে একটি টাকাও ছিল না। পরিবারের জন্য একটি বাড়ি ছাড়া আর কিছুই রেখে যেতে পারেননি। পৈতৃক সম্পত্তি যা ছিল, তাতে হাত পড়েনি বলেই পৈতৃক সম্পত্তি বেঁচে গিয়েছিল। অন্যথায় ঐটাও বাঁচতো না। এই ছিলেন বঙ্গবন্ধু। আপাদমস্তক একজন মানুষ। হিন্দু না, মুসলিম না, খ্রিস্টান না, ইহুদি না। কী ছিলেন তিনি? একজন মানুষ ছিলেন। এই বিষয়টি যদি আমরা উপলব্ধি করতে না পারি তাহলে তাঁর প্রকৃত দর্শন কী সেটি আমরা বুঝতে পারব না।

বঙ্গবন্ধু মানুষের সমতায় বিশ্বাস করতেন। মানুষের সমতায় বিশ্বাস করলে আপনি আইনের সমতায়ও বিশ্বাসী হবেন। এভরি ওয়ান ইজ ইকুয়্যাল ইন আই অব ‘ল’ এটি আপনি বুঝবেন। মানুষের সমতায় আমরা বিশ্বাস করিনা বলেই, আইনের সমতায় আমরা বিশ্বাস করিনা। আমি এমপি, আমি আইন ভঙ্গ করলে আমাকে সহযোগিতা করার জন্য যেভাবে আইনজ্ঞরা দাঁড়িয়ে যাবেন, সাধারণ মানুষ যদি আইন ভঙ্গ করে তার পক্ষে সেভাবে দাঁড়াবে না কেউ। এটাই আমাদের সমাজ! এখান থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তাঁকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কেন বলি? তিনি যে কাজটি করে গেছেন সেটি বাঙালিদের মধ্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ। সেটি হলো তিনি বাঙালিদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গিয়েছেন। বাঙালিদের কখনো কোনো স্বাধীন দেশ ছিল না। বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাঙালির জন্য নিজস্ব রাষ্ট্র উপহার দিয়ে গিয়েছেন।

ত্রিশ লক্ষ মানুষ রক্ত দিয়ে গিয়েছেন এই স্বাধীনতার জন্য। আড়াই লক্ষ থেকে তিন লক্ষ কন্যা, মা, বোন এবং সহধর্মিণী বা প্রেমিকা তাঁরা নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে এই দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছেন। এখনও অসংখ্য অগণিত মুক্তিসংগ্রামী পঙ্গু হয়ে আছেন। এতো সহজ না, যতো পেয়ারের লোকই হোক, যারা জাতীয় সঙ্গীত গায় না- এমন লোকদের সঙ্গে আমি হাত মিলাবো না। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে অনীহা প্রকাশ করে, এমন কোনো লোকের সঙ্গে আমি হাত মিলাবো না। এমনকি আমার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও যদি করে, আমি সেটি করবো না। কারণ আমি যুদ্ধে তো আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে যায়নি। আমি যুদ্ধে গিয়েছিলাম ঐ ব্যক্তির নির্দেশে, যিনি বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তিনি তো আমাকে বলেননি স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করতে। তিনি কিন্তু তথাকথিত ধর্মীয় রাজনীতিবিদদের (যারা আসলেই ধর্মান্ধ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, ইসলামের পক্ষের লোকও নয়) সঙ্গে হাত মিলান নাই। সত্তর সালে ওনার সম্পর্কে বলা হয়েছে নৌকা মার্কায় ভোট দিলে এদেশে ইসলাম থাকবে না, চুয়ান্ন সালে বলা হয়েছিল নৌকায় ভোট দিলে বিবি তালাক হয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের মুসলমানরা ঠিক করেছে, বিবি তালাক হোক তবু আমরা নৌকায় ভোট দিব, আর বিবিরা বলেছেন যাক স্বামী- আমরা নৌকায় ভোট দিব। মোল্লাদের কথা কেউ শুনে না। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, সারাদেশে স্বচ্ছ সুন্দর ভোট হলে সমস্ত মোল্লারা মিলে পাঁচ ভাগের বেশি ভোট পাবে না। তাহলে কীসে এতো ভয়?

লেখক: যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, পঁচাত্তরের প্রতিরোধ যোদ্ধা, সংসদ সদস্য
সম্পাদক, মত ও পথ।

শেয়ার করুন