দেশের সব নাগরিকদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সকল শ্রেণি পেশার নাগরিক পেনশন সুবিধা পাবেন। সর্বজনীন পেনশনে রয়েছে চারটি স্কিম। প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবাস স্কিম।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের প্রগতি স্কিম। স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম। স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য সমতা স্কিম।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
এরই মধ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা ২০২৩ এর গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। চার স্কিমের মধ্যে রয়েছে- প্রবাস স্কিম (প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য), প্রগতি স্কিম (বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য), সুরক্ষা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য) এবং সমতা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য)। এসব স্কিমে চাঁদার হার কত হবে তাও নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রবাস স্কিম
বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক তফসিলে বর্ণিত চাঁদার সমপরিমাণ অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় দিয়ে এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন এবং তিনি দেশে প্রত্যাবর্তনের পর সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করতে পারবেন। প্রয়োজনে, স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে, পেনশন স্কিনের মেয়াদপূর্তিতে পেনশনার দেশীয় মুদ্রায় পেনশন পাবেন।
প্রগতি স্কিম
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী বা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা দিয়ে এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কর্মচারীদের জন্য এ স্কিমে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে স্কিমের চাঁদার ৫০ শতাংশ কর্মচারী এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দেবে। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ স্কিমে অংশ না নিলে, ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী নিজ উদ্যোগে এককভাবে এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।
সুরক্ষা স্কিম
অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতী, ইত্যাদি তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা দিয়ে এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।
সমতা স্কিম
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক, সময় সময়, প্রকাশিত আয়সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী ব্যক্তিরা (যার বর্তমান আয় সীমা বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা) তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা দিয়ে এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।
স্কিমে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা ও নিবন্ধন
১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী জাতীয় পরিচয়পত্রধারী সব বাংলাদেশি নাগরিক তাদের জন্য প্রযোজ্য কোনো স্কিমে অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন।
তবে, বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকরাও স্কিমে অংশ নিতে পারবেন এবং সেই ক্ষেত্রে স্কিমে অংশ নেওয়ার তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা দেওয়া শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন সেই বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন।
প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারাও তাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে, সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে তার অনুলিপি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে।
এছাড়া নিয়মিতভাবে পাসপোর্ট নবায়ন বা পুনঃইস্যুর ক্ষেত্রে নবায়ন করা বা পুনঃইস্যু করা পাসপোর্টের অনুলিপি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিরা তাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। তবে, স্কিমে অংশ নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা সমর্পণ করতে হবে।
কোনো স্কিমে নিবন্ধনের জন্য দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিককে কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূরণ করে আবেদন করতে হবে। যার বিপরীতে আবেদনকারীর অনুকূলে একটি ইউনিক আইডি নম্বর দেওয়া হবে।
আবেদনে উল্লিখিত আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে এবং অনিবাসী আবেদনকারীর ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ই-মেইলের মাধ্যমে ইউনিক আইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা দেওয়ার তারিখ অবহিত করা হবে।
মাসিক চাঁদা
যেকোনো স্কিমে নিবন্ধিত হলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ওই স্কিমের জন্য ধার্য করা হারে নিয়মিত চাঁদা দিতে হবে।
নিবন্ধনের পর আবেদনকারী মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বা তফসিলি ব্যাংকের কোনো শাখায় ওটিসি পদ্ধতিতে কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে মাসিক চাঁদা জমা করবেন।
প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরা ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় মাসিক চাঁদার টাকা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমা করবেন।
নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা জমা করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা দেওয়া যাবে। এক মাস অতিবাহিত হলে পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ হারে বিলম্ব ফি জমা দিয়ে হিসাবটি সচল রাখা যাবে।
কোনো চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে ৩ কিস্তি চাঁদা জমাদানে ব্যর্থ হলে তার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে এবং প্রতিদিনের জন্য উপবিধি অনুযায়ী সমুদয় বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল করা হবে না।
চাঁদাদাতা মাসের নামোল্লেখ করে যেকোনো পরিমাণ চাঁদার টাকা অগ্রিম হিসাবে জমা দিতে পারবেন।
কোনো প্রতিষ্ঠান স্কিমে অংশ নিলে কর্মী এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ধার্য করা মাসিক চাঁদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একত্রে তহবিলে জমা করতে হবে।
সব স্কিমের জন্য চাঁদার কিস্তি চাঁদাদাতার পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধের সুযোগ থাকবে।
চাঁদার টাকা জমা হলে চাঁদাদাতার রেজিস্টার্ড (এনইআইআর) মোবাইল নম্বরে অবহিত করা হবে এবং নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা না দিলে বিলম্ব ফিসহ চাঁদা জমাদানের জন্য চাঁদাদাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে মেসেজ দেওয়া হবে।
শারীরিক ও মানসিকভাবে অসমর্থ চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে বিধান
কোনো চাঁদাদাতা চাঁদা প্রদানকালে শারীরিক ও মানসিক অসামর্থ্যের কারণে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মহীন ও উপার্জনে অসমর্থ হলে তাকে অস্বচ্ছল চাঁদাদাতা হিসেবে ঘোষণার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করতে পারবেন।
কোনো চাঁদাদাতার অসচ্ছলতা নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞাপন দ্বারা, কেন্দ্রীয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৃথক পৃথক মেডিকেল বোর্ড গঠন করবে। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ ছাড়া কোনো চাঁদাদাতাকে অস্বচ্ছল চাঁদাদাতা হিসেবে ঘোষণা করা যাবে না।
চাঁদাদাতার মানসিক বা শারীরিক অসামর্থ্যের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সচিব, অর্থ বিভাগ বরাবর আপিল দায়ের করতে পারবেন।
আপিল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নেওয়া সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
অস্বচ্ছল চাঁদাদাতা হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পর সর্বোচ্চ ১২ মাস পর্যন্ত চাঁদা পরিশোধ না করলেও চাঁদাদাতার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে না।
মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি চাঁদাদাতা হলে চাঁদা দেওয়ার বিধান
কোনো চাঁদাদাতা চাঁদা প্রদানকালে মানসিক অসামর্থ্যের কারণে অস্বচ্ছল হিসেবে ঘোষিত হলে কর্তৃপক্ষ স্কিমের স্বত্ব ওই মানসিক ভারসামাহীন ব্যক্তির নমিনি অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীর ওপর ন্যস্ত করতে পারবেন।
কোনো মানসিক ভারসাম্যহীন চাঁদাদাতার নমিনি বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী তার পেনশন হিসাবে চাঁদার কিস্তি নিয়মিত জমা করে স্কিম চালু রাখতে পারবেন। স্কিমের মেয়াদ শেষে ওই স্কিমের বিপরীতে পেনশনের অর্থ নমিনি বা নমিনিরা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা উত্তোলন করতে পারবেন।
চাঁদাদাতা বা পেনশনার নিখোঁজ হলে চাঁদা দেওয়ার বিধান
চাঁদাদাতা নিখোঁজ হলে নিখোঁজ ব্যক্তির নমিনি বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়রি করে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি পেনশনের সম্মুখ অফিসে বা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে চাঁদাদাতার পেনশন হিসাব বা কর্পাস হিসাবে নির্দিষ্ট চাঁদার অর্থ জমা দিতে পারবেন।
চাঁদাদাতা নিখোঁজ হওয়ার সাত বছর অতিক্রান্ত হলে এবং নিখোঁজ ব্যক্তি ফিরে না এলে, ওই চাঁদাদাতার স্কিম স্থগিত রাখতে হবে এবং পেনশনের প্রাপ্যতা অর্জিত হওয়া সাপেক্ষে তাকে নিখোঁজ পেনশনার গণ্য করে উপবিধি (৩) এর বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
পেনশনার তার বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে নিখোঁজ হলে, তার নিখোঁজ হওয়ার ৭ বছর পর পেনশনারের মাসিক পেনশন বাবদ পাওনা তার নমিনি বা নমিনিরা অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীদের দেওয়া যাবে। তবে, নিখোঁজ পেনশনারের নমিনি বা নমিনিরা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হতে যতদিন লাগে ততদিন পর্যন্ত মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন।
চাঁদাদাতা কর্তৃক নমিনি মনোনয়ন
স্কিমের চাঁদাদাতা, স্কিমে জমা করা অর্থ বা জমার বিপরীতে প্রাপ্য পেনশন বাবদ অর্থ তার মৃত্যুর পর গ্রহণ বা উত্তোলনের জন্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূরণ করে এক বা একাধিক নমিনি মনোনয়ন করতে পারবেন। যে কোনো সময় নমিনি বাতিল করে এক বা একাধিক নতুন নমিনি নির্বাচন করা যাবে।
চাঁদাদাতা কর্তৃক প্রদত্ত একক নমিনি বা একাধিক নমিনির ক্ষেত্রে সব নমিনি মৃত্যুবরণ করলে চাঁদাদাতাকে পুনরায় নমিনি মনোনয়ন করতে হবে।
নমিনি নাবালক হলে চাঁদাদাতার মৃত্যুর পর নমিনি সাবালক না হওয়া পর্যন্ত নমিনির পক্ষে স্কিমের প্রাপ্য অর্থ গ্রহণ বা উত্তোলনের জন্য চাঁদাদাতা নমিনি প্রদানকালে যেকোনো ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে পারবেন। এ ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে চাঁদাদাতার মৃত্যুর পর নমিনি সাবালক না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি নাবালকের প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য হবেন।
চাঁদাদাতার পেনশন হিসাব বা কর্পাস হিসাব
স্কিমের আওতাভুক্ত প্রত্যেক চাঁদাদাতার নামে একটি পৃথক পেনশন হিসাব থাকবে। যা তার কর্পাস হিসাব হবে এবং উক্ত কর্পাস হিসাবে চাঁদাদাতা কর্তৃক জমা করা চাঁদার অংক হিসাবায়ন করা হবে।
কর্তৃপক্ষ প্রতি অর্থবছর শেষে সর্বজনীন পেনশন তহবিলের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী অনুযায়ী কর্পাস হিসাবের স্থিতির ওপর লভ্যাংশ ঘোষণা করবে।
চাঁদাদাতার জমা করা চাঁদার ওপর ঘোষিত নির্ধারিত হারে লভ্যাংশ আকলন দেখিয়ে কর্পাস হিসাবের পুঞ্জীভূত জমার পরিমাণ নির্ধারিত হবে।
চাঁদাদাতার কর্পাস হিসাবে পুঞ্জীভূত জমার ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মাসিক পেনশনের (অ্যানুইটি) পরিমাণ নিরূপণ করা হবে।
স্কিমের রূপান্তর
চাঁদাদাতা যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে তার অনুকূলে চালু করা স্কিমের পরিবর্তে অন্য স্কিম বা স্কিমের চাঁদা দেওয়ার হার পরিবর্তন করতে পারবেন।
স্কিম রূপান্তরের ক্ষেত্রে রূপান্তরিত স্কিমে নতুন চাঁদার হিসাব পৃথক রেখে লভ্যাংশ ও পুঞ্জীভূত জমার অর্থের হিসাব করতে হবে, যা পূর্বতন স্কিমের পুঞ্জীভূত জমার সঙ্গে যুক্ত হবে।
স্কিম রূপান্তরের কারণে মেয়াদ পূর্তিতে মাসিক পেনশনের পরিমাণ পুনর্নির্ধারিত হবে।
স্কিমের স্বত্ব
এ বিধিমালার অধীন কোনো চাঁদাদাতার অনুকূলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যু করা কোনো স্কিমের সম্পূর্ণ স্বত্ব ওই স্কিমের চাঁদাদাতার থাকবে।
পেনশন স্কিমে চাঁদাদাতা ওই স্কিমের স্বত্ব জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সত্ত্বার কাছে হস্তান্তর করতে পারবেন না। তবে স্কিম বা পেনশন চলাকালে যেকোনো সময়ে চাঁদাদাতার মৃত্যু হলে ওই স্কিমের অর্থ চাঁদাদাতা কর্তৃক মনোনীত নমিনি বা নমিনির অবর্তমানে চাঁদাদাতার উপযুক্ত উত্তরাধিকারী বরাবর হস্তান্তরে কোনো বাধা থাকবে না।
জমা দেওয়া চাঁদা থেকে ঋণগ্রহণ
চাঁদাদাতা নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, গৃহনির্মাণ, গৃহ মেরামত এবং সন্তানের বিয়ে ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনে তহবিলে কেবল তার জমা করা অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করতে পারবেন। যা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ধার্য করা ফি’সহ সর্বোচ্চ ২৪ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে এবং সমুদয় অর্থ চাঁদাদাতার হিসাবে জমা হবে। গৃহীত ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত নতুনভাবে কোনো ঋণ নেওয়া যাবে না।
চাঁদাদাতা বা পেনশনারের মৃত্যুর পর স্কিমের বিপরীতে প্রাপ্য অর্থ প্রদান
চাঁদাদাতা নমিনি প্রদান আগে মৃত্যুবরণ করলে এবং তার মৃত্যুর পর নমিনি মনোনয়ন কার্যকর থাকলে ওই স্কিমের অর্থ নমিনি প্রাপ্য হবেন।
নমিনি নাবালক হলে চাঁদাদাতা বা পেনশনারের মৃত্যুর পর বিধি ১০ এর উপবিধি (৩) এর বিধান অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্কিমের বিপরীতে জমা করা অর্থ বা পেনশনের অর্থ প্রাপ্য হবেন এবং কোনো ব্যক্তি নিয়োগপ্রাপ্ত না হলে নাবালকের আইনসম্মত অভিভাবক উল্লিখিত স্কিমের আওতায় পাওনা অর্থ প্রাপ্য হবেন।
কোনো স্কিমের বিপরীতে একাধিক নমিনি থাকলে এবং যেকোনো একজন নমিনি মৃত্যুবরণ করলে এবং মৃত নমিনির বিপরীতে নতুন কোনো নমিনি মনোনয়ন না করা হলে, জীবিত নমিনি বা নমিনিরা উল্লিখিত স্কিনে উত্তরাধিকারী হিসেবে গণ্য হবেন এবং ওই স্কিনের অর্থ প্রাপ্য হবেন।
কোনো স্কিমের চাঁদাদাতা মাসিক পেনশন প্রাপ্যতা অর্জিত হওয়ার পর মৃত্যুবরণ করলে ওই স্কিনে জমা করা পুঞ্জীভূত অর্থের ভিত্তিতে পেনশন নির্ধারণ করে তার নমিনি বা নমিনিরা অথবা নমিনি না থাকলে তার উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীদের পেনশন দেওয়া যাবে এবং এ ক্ষেত্রে উপ-বিধি (৫) এর বিধান প্রযোজ্য হবে।
এ বিধির আওতায় কোনো স্কিমের চাঁনাদাতা পেনশনে থাকাকালীন তার বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মৃত্যুবরণ করলে পেনশনারের নমিনি বা নমিনিরা অথবা নমিনি না থাকলে তার উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা অবশিষ্ট সময়ের জন্য অর্থাৎ মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হতে যতদিন অবশিষ্ট থাকবে ততদিন পর্যন্ত মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন।
কোনো স্কিমের চাঁদাদাতা মাসিক পেনশন প্রাপ্যতা অর্জিত হওয়ার আগে মৃত্যুবরণ করলে তার নমিনি বা নমিনিরা অথবা নমিনির অবর্তমানে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা মুনাফাসহ জমা করা অর্থ ফেরত পাবেন।
চাঁদাদাতা বা পেনশনার মৃত্যুবরণ করলে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধান
নমিনির অবর্তমানে উত্তরাধিকারী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার কর্তৃক ইস্যু করা উত্তরাধিকার সনদের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ উত্তরাধিকার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সচিব, অর্থ বিভাগ বরাবর আপিল করতে পারবেন। আপিল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
রেকর্ড সংরক্ষণ
কর্তৃপক্ষ স্কিমের হিসাব, পেনশন হিসাব, কর্পাস হিসাব, চাঁদাদাতা ও নমিনির জীবন বৃত্তান্তসহ যাবতীয় তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষণ ও নিয়মিত হালনাগাদ করার পাশাপাশি ব্যাকাপ রাখবে।