সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুক্তরাজ্য সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের কর্মকর্তারা বলেছেন, সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, তারা প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন, তবে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারিত হয়নি।
তবে আলাদা একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, তাই বলে সফরটি হবে না এমন মনে করারও কোনো কারণ নেই।
২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার পর এটিই হবে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রথম যুক্তরাজ্য সফর।
এই আমন্ত্রণের খবরটি প্রথম প্রকাশ করে লন্ডনের দ্যা টাইমস পত্রিকা।
সৌদি সরকারের একজন কঠোর সমালোচক খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর সেই সময়ে পশ্চিমা দেশগুলো সৌদি যুবরাজের নিন্দা করেছিল।
এই ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই উপসংহারে পৌঁছেছিল যে যুবরাজ মোহাম্মদ ওই হত্যাকাণ্ডের অনুমোদন দিয়েছেন, যদিও তিনি নিজে এর সঙ্গে জড়িত থাকার কথাটি অস্বীকার করে আসছেন।
বিবিসির নিরাপত্তা সংবাদদাতা ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলেন, সৌদি সরকার অন্তত এক মাস আগে থেকে এই সফরের পরিকল্পনা করছে।
তিনি জানান, এই সফরটি সম্ভবত অক্টোবর মাসে হতে যাচ্ছে, যদিও সরকারি ডায়েরিতে এখনো কোনো তারিখ নেই।
ব্রিটেনের মন্ত্রীরা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষার কথা ইঙ্গিত করেছেন।
জ্বালানি তেলভিত্তিক অর্থনীতি থেকে দূরে সরে আসতে সৌদি সরকার তার ট্রিলিয়ন পাউন্ডের বিনিয়োগ তহবিলের জন্য লন্ডনে একটি অফিসও খুলেছে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ব্রিটেনের জ্বালানি নিরাপত্তামন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপস মহাকাশ, প্রযুক্তি ও জরুরি খনিজের মতো খাতে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে সৌদি আরব সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
ব্রিটেনের সরকার পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা জিসিসি’র সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে উপসাগরীয় দেশগুলোর সমর্থন আদায়েরও চেষ্টা করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি সম্প্রতি কাতার, কুয়েত ও জর্দান সফর করেছেন।
রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরতার অবসান ঘটাতে উপসাগরীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গত বছর সৌদির রাজধানী রিয়াদে গিয়ে যুবরাজ মোহাম্মদের সঙ্গে দেখা করেন।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান শেষবার ব্রিটেনে গিয়েছিলেন ২০১৮ সালের মার্চ মাসে, খাশোগি হত্যার ছয় মাস আগে।
তখন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন থেরেসা মে। সফরকালে সৌদি যুবরাজ রানির সঙ্গে দুপুরের খাবার ও তৎকালীন প্রিন্স অব ওয়েলস ও ডিউক অব কেমব্রিজের সঙ্গে ডিনার করেন।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তেল রপ্তানিকারক দেশের কার্যত শাসনকর্তা। রক্ষণশীল উপসাগরীয় দেশটিতে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়াসহ বেশ কিছু সংস্কার কাজের জন্য তিনি পশ্চিমা নেতাদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
তবে জামাল খাশোগি হত্যার কারণে তার আন্তর্জাতিক খ্যাতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জামাল খাসোগি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই মোহাম্মদ বিন সালমানের ভূমিকা নিয়ে নানা সন্দেহ তৈরি হয়।
সে সময় সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলতে বাধ্য হন যে জামাল খাসোগির নিখোঁজের সঙ্গে সৌদি আরব সরকার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের ‘কঠোর শাস্তি’ পেতে হবে।
এর জবাবে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বলেছিলেন, তারাও এর পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত। বৈশ্বিক তেলের বাজারে সৌদি আরবের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি বাংলা